আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য আলোচনা কর।

অথবা, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, আধুনিক রাষ্ট্রের লক্ষ্য সম্পর্কে যা জান লিখ।
অথবা, আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য কী? আলোচনা কর।
অথবা, আধুনিক রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা কর।
উত্তর ভূমিকা :
জনসমষ্টি, ভূখণ্ড, সার্বভৌমত্ব, সরকার এ চারটি অপরিহার্য উপাদান নিয়ে রাষ্ট্রের সৃষ্টি। রাষ্ট্রের প্রকৃতির উপর তার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নির্ভর করে। রাষ্ট্রের প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে যেমন বাদানুবাদের অন্ত নেই, তেমনি লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করেও তাদের মধ্যে যথেষ্ট মত পার্থক্য লক্ষ করা যায়। সুতরাং, রাষ্ট্রের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোনো সর্বসম্মত অভিমত জ্ঞাপন করা আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য : প্লেটো, এরিস্টটল প্রমুখ গ্রিক দার্শনিকগণ, ‘সুন্দর মঙ্গলময় জীবনের প্রতিষ্ঠাকে রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য বলে মনে করতেন। পরবর্তী সময়ে আদর্শবাদী দার্শনিকগণ রাষ্ট্রকে একটি মহিমান্বিত প্রতিষ্ঠান বলে কল্পনা করে রাষ্ট্রকেই রাষ্ট্রের চরম লক্ষ্য বলে বর্ণনা করেছেন। জন লক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছেন। তার মতে, মানবসমাজের মঙ্গলসাধন করা রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য হলেও সম্পত্তির সংরক্ষণ করাই হলো তার চরমতম উদ্দেশ্য। এডাম স্মিথ রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা :
১. সমাজে অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং বহিঃশক্তির আক্রমণ থেকে তাকে রক্ষা করা।
২. সমাজের প্রতিটি ব্যক্তিকে অন্যায় ও অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করা এবং
৩. ব্যক্তিগত উদ্যোগ সম্পাদন করা সম্ভব নয় এমন সব কার্যসম্পাদন করা এবং জনগণের জন্য অত্যাবশ্যক প্রতিষ্ঠানসমূহ গঠন ও সংরক্ষণ করা। জার্মান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্রুন্টসলি রাষ্ট্রের দ্বৈত উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করেন। এ দুটি উদ্দেশ্য হলো :
ক. প্রত্যক্ষ উদ্দেশ্য এবং
খ. পরোক্ষ উদ্দেশ্য।
জাতীয় জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন এবং জাতীয় শক্তির সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণকে তিনি রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ উদ্দেশ্য এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষাকে পরোক্ষ উদ্দেশ্যরূপে বর্ণনা করেছেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিমত জ্ঞাপন করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য স্থান, কাল ও পাত্রভেদে বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। সাধারণভাবে জনকল্যাণ সাধনকে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য বলে মনে করা হয়। বাস্তবে কিন্তু বিপরীত চিত্র লক্ষ করা যায়। মনুষ্য সমাজের ক্রমবিবর্তিত ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনা করলে একথা স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, সমাজ বিবর্তনের একটি বিশেষ স্তরে সমাজের মধ্য থেকেই সামাজিক প্রয়োজন সাধনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়।