অস্তিত্ববাদী নারীবাদ কী?

অথবা, অস্তিত্ববাদী নারীবাদ বলতে কী বুঝ?
অথবা, অস্তিত্ববাদী নারীবাদ কাকে বলে?
অথবা, অস্তিত্ববাদী নারীবাদ সম্পর্কে তুমি যা জান সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, নারীবাদের অস্তিত্ববাদী তত্ত্ব সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, অস্তিত্ববাদী নারীবাদ সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বিংশ শতাব্দীর সর্বগ্রাসী জীবনব্যবস্থায় ব্যক্তির পরিচয় নিরূপণে ব্যক্তিবাদী মতবাদ হিসেবে অস্তিত্ববাদ (Existentialism) ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, অস্তিত্ব, ও স্বাতন্ত্র্যের উপর গুরুত্ব প্রদান করে। সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠাই অস্তিত্ববাদী নারীবাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। যেখানে নারী তার নিজ-সত্তাকে বিকশিত করবে এবং যেখানে নারী ও পুরুষের মধ্যে সাম্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে।
অস্তিত্ববাদী নারীবাদ : অস্তিত্ববাদী নারীবাদের প্রধান প্রবক্তা ফরাসি দার্শনিক ও সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ভোয়ারি ১৯৪৯ সালে তার আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ ‘The Second Sex’ প্রকাশ করেন। উক্ত গ্রন্থটি বিংশ শতাব্দীর ৬০-এর দশকে মার্কিন নারীমুক্তি আন্দোলনে এবং ৭০ এর দশকে ইউরোপীয় নারীদের আন্দোলনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বুভোয়ার বলেন, অস্তিত্ববাদী নারীবাদে ‘নিজ’ বা আত্ম (Self) এবং অন্য বা ‘অপর’ (other) এর ধারণা গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে ‘নিজ’ হচ্ছে পুরুষ এবং অপর হচ্ছে নারী। ‘অপর’ অর্থাৎ নারী হচ্ছে ‘নিজ’ তথা পুরুষের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই পুরুষ নিজের স্বাধীনতা রক্ষার্থে নারীকে অবনত করে রাখে। সিমন দ্য বুভোয়ার মনে করেন, এভাবেই পুরুষ নিজের সত্তার মধ্যে নারীকে ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস নেয়ায় নারী ও পুরুষের মধ্যে দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ ‘নিজ’ পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করলে ‘অপর’ এর সাথে বিরোধ বাঁধে। তাই তিনি লেন, ‘নিজ’ ও ‘অপর’ এর মধ্যে সংঘাত নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সংঘাত সৃষ্টি করে। বুভোয়ার নারী- পুরুষের এই সংঘাতকে ‘অস্তিত্ববাদের সংঘাত হিসেবে নারীবাদে প্রয়োগ করেন। মার্কসবাদ অনুসারে পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণ ঘটলেই আপনা আপনি সমাজে নারী পুরুষ সম্পর্কে সাম্যতা আসবে । কিন্তু বুভোয়ার তা মনে করেন না। তিনি বলেন নারীর উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য পুরুষ নানা কাল্পনিক কাহিনি সৃষ্টি করে। নারীকে চিত্রিত করে রহস্যময়ী, বিচারশক্তিহীন ও বহুরূপী হিসেবে। বিভিন্ন লেখনীতে নারীকে বুঝানো হয় আত্মত্যাগই নারীর আদর্শ। আর এভাবেই কল্প লেখকদের লেখনী নারীকে ‘অপর’ এ পরিণত করে। তাই বুভোয়ার মনে করেন, নারী তার ‘নিজ’ কে সাবজেক্টে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে নারীর প্রচলিত ভূমিকার অবসান ঘটাতে হবে এবং নারীকে নতুন রূপে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। তাহলেই নারী আর পুরুষের ‘অপর’ থাকবে না। নারী তার ‘নিজ’ অস্তি ত্বকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, অস্তিত্ববাদী নারীবাদ আজও তার গুরুত্ব হারায়নি। কেননা নারীকে প্রকৃত অতিত্বশীল মানুষ হিসেবে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে অস্তিত্ববাদী দর্শন চর্চার কোনো বিকল্প নেই। অস্তিত্ববাদী নারীবাদও নারী অধস্তনতার মুখ্য কারণ হিসেবে পুরুষতন্ত্রকে অভিহিত করে। যা সর্বকালে এবং সর্বযুগেই সত্য।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%93-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%90%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%93/