অথবা, অপরাধের স্বরূপ বা প্রকৃতি আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজ ও আইন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। আইন ও সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে অপরাধেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে। রোমান আইনে পিতৃতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পিতাকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জীবনমরণের অধিকার দেয়া হতো। পিতা তার পরিবারের যে কোন সদস্যকে হত্যা করতে পারত এবং তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হতো না। কিন্তু বর্তমান কালে এ ধরনের কথা চিন্তাই করা যায় না। অপরাধ সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা, সংহতি, নিরাপত্তা, মূল্যবোধ ও প্রগতি নষ্ট করে। মানুষের যেসব কাজ সমাজের চোখে অন্যায় এবং আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য তাই অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
অপরাধের শর্ত বা বৈশিষ্ট্যসমূহ : অপরাধের কতিপয় নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যখন এসব বৈশিষ্ট্য কোন কাজের মধ্যে দেখা যাবে, কেবল তখনই তা অপরাধ বলে গণ্য হবে। আর তাই এগুলোকে বলা হয় অপরাধের শর্ত বা বৈশিষ্ট্য। নিম্নে অপরাধের শর্ত বা বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধরা হলো :
১. আইন লঙ্ঘনকারীর কাজ : অপরাধী হতে হলে প্রয়োজন একটি কাজ অথবা কোন বিশেষ কর্তব্যে অবহেলা করা। কোন ব্যক্তি আইনগতভাবে নিষিদ্ধ একটি কাজ করার উদ্দেশ্য পোষণ করলেই তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না, কাজটি অবশ্যই ঐ ব্যক্তির দ্বারা সংঘটিত হতে হবে। এমনকি কারও বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অভিপ্রায়ও অপরাধ বলে গণ্য হবে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কতিপয় লোক কাউকে অপহরণের চিন্তা করল। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা কাউকে অপহরণ করছে কিংবা অপহরণ করার কোন বাস্তব পন্থা অবলম্বন করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ঐ
অপহরণের অভিপ্রায়কে অপরাধ বলা যাবে না। আবার কর্তব্যে অবহেলার কারণেও অপরাধ হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোন নৈশপ্রহরীর কর্তব্যে অবহেলার দরুন যদি চোর কোন বাড়িতে চুরি করতে সমর্থ হয়, তাহলে কর্তব্যে অবহেলা হবে ঐ নৈশপ্রহরীর অপরাধ আর চুরি করা হবে চোরের অপরাধ।
২. কর্তব্যে অবহেলা : কাজটি অথবা কর্তব্যে অবহেলা যে নিষিদ্ধ তা নির্দিষ্টভাবে অপরাধ আইনে উল্লেখ থাকতে হবে। মূলত ঐ ধরনের কর্তব্যে অবহেলা কিংবা কাজ অপরাধের পূর্বশর্ত।
৩. অপরাধের মানসিকতা : অপরাধের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো অপরাধমূলক উদ্দেশ্য। অপরাধী হতে হলে কোন ব্যক্তির মধ্যে অপরাধ কাজটি করার অভিপ্রায় বা উদ্দেশ্য থাকতে হবে। উদ্দেশ্যহীনভাবে যদি কোন ব্যক্তি কোন দোকানে ঢুকে ভুলক্রমে একটি কলম তুলে পকেটস্থ করে তবে তা অপরাধ হবে না।
৪. উদ্দেশ্য : অপরাধী হতে হলে অবশ্যই কাজটি অপরাধমূলক কাজ এবং অপরাধমূলক কাজটি করার উদ্দেশ্য থাকতে হবে।
৫. শাস্তি : অপরাধ হলে কাজটি অবশ্যই শাস্তিযোগ্য হবে এবং তা অবশ্যই আইনে উল্লেখ থাকতে হবে।
৬. সংহতির পরিপন্থী : অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সমাজের সংহতির পরিপন্থী। এটি মানুষের আবেগ ও অনুভূতিকে আহত করে। কোন অনানুষ্ঠানিক বাহন বা সংস্থা দ্বারা একে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
৭. নিষিদ্ধ : অপরাধ সমাজ বা সরকারি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিষিদ্ধ । অপরাধ মূলত অসৎ উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়ে থাকে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপেক্ষিতে বলা যায় যে, দেশের প্রচলিত আইনরীতি ও সমাজবিরোধী কার্যকলাপকে অপরাধ বলে। আর এই অপরাধ ব্যক্তি জীবনের অধঃপতন ও সামাজিক জীবন সমস্যা ও রাষ্ট্রীয় জীবনে স্থিতিহীনতা সৃষ্টি করে। এ অপরাধের বৈশিষ্ট্য বা শর্তসমূহ অপরাধীকে অপরাধ থেকে রক্ষার জন্য সংশোধনমূলক কাজ করে থাকে।