অন্য কোন নয়া সড়কের স্বপ্নতো তাহাদের মনে কেহ জাগায় নাই।” ব্যাখ্যা কর।

উৎস : ব্যাখ্যেয় গদ্যাংশটুকু শামসুদ্দীন আবুল কালাম বিরচিত ‘পথ জানা নাই’ গল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এখানে মাউলতলাবাসী বিভ্রান্ত মানুষদের অসহায়ত্ব সম্পর্কে এই মন্তব্য করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটা গ্রামের নাম মাউলতলা। এ গ্রামের সকল মানুষই কৃষিজীবী। গহুরালির বাড়ি এখানেই। সে ছিল পাঁচ কুড়া জমির মালিক। জোনাবালির উদ্যোগে গ্রামের উপর দিয়ে যে রাস্তা তৈরি হলো তাতে গহুরালির দুই কুড়া জমিই নষ্ট হলো। কিন্তু গহুরালি এজন্য দুঃখ করেনি। কেননা জোনাবালি তাকেসহ অন্যদেরকে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখিয়েছিল। রাস্তা হলে নতুন জগতের সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হবে এবং তার ফলে আয়ের পথ খুলে যাবে এই স্বপ্নে বিভোর হয়ে গহুরালিরা জমি ছেড়ে দিয়েছিল। প্রথম প্রথম দেখা গেল, ঠিকই আয়ের পথ খুলে দিয়েছে। গ্রাম থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র শহরে নিয়ে গিয়ে গহুরালি
বেশ কাঁচাপয়সা উপার্জন করল। দিন ভালোই যাচ্ছিল। হঠাৎ শুরু হলো যুদ্ধ। দুর্ভিক্ষ নেমে এল। তার ঢেউ এসে লাগল মাউলতলায়। ঘরে ঘরে অভাব দেখা গেল। শহর থেকে মিলিটারির দালাল এল মাউলতলা গ্রামে। সে মিলিটারিকে বিভিন্ন জিনিস সরবরাহ করে। গহুরালি উপার্জনের আশায় ঐ দালালের সাথে খাতির জমাল। একদিন রাতে দালালটি গহুরালির স্ত্রী হাজেরাকে নিয়ে পালিয়ে গেল। স্ত্রী হারিয়ে গহুরালি পাগল হয়ে উঠল। তার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল ঐ রাস্তাটার উপর। ঐ রাস্তাই তার ঘর ভেঙেছে। একটা কোদাল নিয়ে উন্মত্তবৎ সে রাস্তাটা কোপাতে লাগল। কেউ এর কারণ জিজ্ঞেস করলে গহুরালি জানাল, যে রাস্তা সে চেয়েছিল তা এটা নয়। এ রাস্তা তার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। তাই সে একে ধ্বংস করতে চায়। সবার মনে প্রশ্ন তবে কোন রাস্তা হলে ভালো হতো? এ প্রশ্নের উত্তর তাদের জানা নেই। অন্য কোন নয়া সড়কের স্বপ্নতো কেউ তাদের দেখায়নি। তাই তারা বিভ্রান্ত মনে দাঁড়িয়ে রইল।
মন্তব্য : গ্রামের সহজ সরল দরিদ্র মানুষ দিকনির্দেশনাহীন। তাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্য কেউ নেই ।