অথবা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে বৌদ্ধ সম্প্রদায় সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধর।
অথবা, বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সেই সুপ্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর লোক বাস করে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা পাশাপাশি বসবাস করে আসছে। প্রতিটি ধর্মের রয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তা বা বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে এ দেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায় উল্লেখযোগ্য।
বৌদ্ধ সম্প্রদায় : বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে হিন্দুদের পরেই বৌদ্ধদের স্থান। প্রাচীনকাল থেকেই এ দেশে বৌদ্ধধর্মের বিকাশ ঘটে। সম্রাট অশোকের রাজত্বের পূর্ব থেকেই এ দেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বাস করত। বৌদ্ধরা প্রথম বসবাস শুরু করে উত্তরবঙ্গে। বিনয় পিটক (ত্রিপিটকের একটি) এবং চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এর বর্ণনা থেকে একথা জানা যায়। অতি প্রাচীনকাল থেকেই (খ্রিস্টের জন্মের বহু পূর্ব থেকে) এ দেশের উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধরা বসবাস করত। গুপ্ত যুগে বৌদ্ধরা সমৃদ্ধি লাভ করে। বাংলাদেশের পাহাড়ি উপজাতির বেশিরভাগ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। সারাদেশে এদের সংখ্যা কম। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এ দেশে আধুনিক বৌদ্ধধর্মের বিকাশ ঘটে। চাকমা, মারমা, চাক উপজাতিরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। বাংলাদেশের বৌদ্ধরা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত। চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার বৌদ্ধরা বড়ুড়া ও সিংহ নামে পরিচিত । দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে জেলাগুলোতে বৌদ্ধদের আধিক্য দেখা যায়। এ দেশে বৌদ্ধধর্মের মূল ধারক ও বাহক চাকমা ও মারমারা আরাকান থেকে বাংলাদেশে আসে। তাই প্রাচীন বাংলার পার্বত্য অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের বিকাশ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায় না। হিন্দুধর্মের সাথে বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে সাদৃশ্য আছে। বৌদ্ধধর্ম, হিন্দুধর্ম থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে বলে অনেকে মনে করে। তবে বৌদ্ধধর্মে দেবদেবী বা ঈশ্বরের কথা বলা হয়নি। বলা হয়ে থাকে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতিবাদস্বরূপ বৌদ্ধধর্মের উৎপত্তি। সমাজে পশু বলি, পূজার্চনা যখন মানুষের প্রকৃত মুক্তির পথ প্রদর্শন করতে পারেনি তখন এ ধর্ম মানুষের মনকে জয় করে। হিন্দু উপনিষদে যেমন জন্মান্তর ও কর্মফলের কথা বলা হয়েছে তেমনি বৌদ্ধধর্মে জন্মান্তর ও কর্মফলের কথা বলা হয়েছে। বৌদ্ধধর্মে অহিংসার স্থান উপরে। সমাজে কারও ক্ষতি না করে নিজের কার্যসম্পাদনের কথা বলা হয়েছে। হিংসা মানুষ ও সমাজকে ধ্বংসের পথে ধাবিত করে। তাই হিংসা বর্জন করে পারস্পরিক সম্প্রীতি বাড়ানোর কথা বৌদ্ধধর্মে বলা হয় । হিন্দুদের ন্যায় বৌদ্ধরা উপাসনার জন্য মন্দির তৈরি করে। হিন্দুদের ন্যায় তারা মূর্তি তৈরি করে পূজা করে, যদিও গৌতম বুদ্ধ মূর্তি পূজাকে সমর্থন দেননি। মন্দিরে বুদ্ধের মূর্তিতে পূজা দেওয়া হয়। বাংলাদেশে বৌদ্ধদেরকে কখনও হীনযান উপসম্প্রদায় বলা হয়। লাঙল আবিষ্কার এবং গরুর সহজলভ্যতার কারণে নদীর উপত্যকায় কৃষির বেশ উন্নতি ঘটে। অনেকগুলো গরু জমিতে চাষ কাজে ব্যবহার করা হতো। জমিতে প্রচুর ফসল ফলত। এতে করে মানুষের খাদ্যাভাব দূর হয়ে যায়। সমাজে প্রচলিত পশুবলি ব্যবস্থার কারণে এক সাথে শত শত পশুর জীবনাবসান ঘটত। এর ফলে পশুর সংখ্যা কমে যায়। দরিদ্র মানুষেরা খাদ্যাভাবে মারা যেতে থাকে। বুদ্ধ এজন্য জীব হত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। বৌদ্ধদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান অনেক কম। সর্বক্ষেত্রে তারা মিতব্যয়িতার পরিচয় প্রদান করে। তাদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে বৌদ্ধ পূর্ণিমা ও মাঘী পূর্ণিমা উল্লেখযোগ্য। বৈশাখী পূর্ণিমাই বৌদ্ধ পূর্ণ িমা। বৌদ্ধ পূর্ণিমায় গৌতমবুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন এবং এ সময়ে তিনি বৌদ্ধত্ব লাভ করেন। বৌদ্ধধর্মের বর্ণ প্রথার কোনো স্থান নেই এবং নারীকে এখানে মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। বর্ণভেদ প্রথা বিলুপ্ত করে মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশে বিদ্যমান আরেকটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী । ধারণা করা হয় বৌদ্ধধর্ম হিন্দুধর্মের ন্যায় প্রাচীন। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪% লোক বৌদ্ধ ধর্মানুসারী।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a8%e0%a6%ac%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a6%bf/
admin

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!