General Knowledge

গ্রামীণ বাংলাদেশে অকৃষি কার্যক্রমের ধরন আলোচনা কর।

অথবা, গ্রামীণ বাংলাদেশের অকৃষি কার্যক্রমের প্রকরণ আলোচনা কর।
অথবা, গ্রামীণ বাংলাদেশে অকৃষি কার্যক্রমের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে লিখ।
অথবা, গ্রামীণ বাংলাদেশের অকৃষি কার্যক্রমের স্তরবিন্যাস উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
গ্রামের চিরন্তর রূপ হচ্ছে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা। কিন্তু শুধু কৃষি কাজ দিয়েই জীবনের সব চাহিদা পরিপূরণ হয় না। গ্রামের ব্যাপক সংখ্যক মানুষ অসম্পূর্ণ কিংবা আংশিকভাবে কৃষি থেকে বেরিয়ে অকৃষি পেশায় নিযুক্ত হচ্ছে। এ প্রবণতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
গ্রামীণ বাংলাদেশে অকৃষি কার্যক্রমের ধরন : নিম্নে অকৃষি কার্যক্রমের ধরন আলোচনা করা হলো :
১. চাকুরি : অকৃষিকাজের প্রথম ও প্রধান ধরন হচ্ছে চাকরি। সাধারণত গ্রামীণ সমাজে ২ ধরনের চাকরিজীবী শ্রেণি
দেখা যায় :

ক. প্রবাসী চাকরিজীবী : এ শ্রেণির চাকরিজীবিগণ পেশাগত কারণে শহরে বা প্রবাসে বসবাস করেন। ছুটি, উৎসব, অনুষ্ঠান ও প্রয়োজনে তারা গ্রামেই অবস্থান করেন। তারা গ্রামে জমি ক্রয় করেন, ঘর-বাড়ির উন্নয়ন করে। প্রবাসী চাকরিজীবিদের মধ্যে পুলিশ, প্রশাসন, সেনা-নৌ-বিমান, বর্ডার গার্ড, এনজিও কোম্পানি সব অসংখ্য সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পেশাজীবিগণ রয়েছেন।
খ. গ্রামে অবস্থানকারী চাকরিজীবী : গ্রামে অবস্থান করেও অনেকে কৃষি বহির্ভূত কাজে সম্পৃক্ত সুযোগ পায়। যেমন-স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, থানা পর্যায়ের বিভিন্ন অফিস-আদালত, হাসপাতাল, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি স্থানে. চাকরিজীবীদের অনেকেই নিকটবর্তী গ্রামের স্থায়ী অধিবাসী।
২. ব্যবসায় : গ্রামীণ অকৃষি কাজের একটি বড় ক্ষেত্র হচ্ছে ব্যবসা। বাজার ও মুদ্রা অর্থনীতির সম্প্রসারণের ফলে গ্রামীণ সমাজে ব্যবসায়ের ক্রমবিস্তার ঘটছে। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ই প্রধান।
৩. আত্মকর্মসংস্থান : অকৃষিকাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হচ্ছে আত্মকর্মসংস্থান। ব্যবসায় বা চাকরির বাইরে যারা কিছু বিনিয়োগ ও নিয়মিত শ্রমদানের মাধ্যমে উপার্জন করে তাদেরকেই আত্মকর্মসংস্থানের অধিকারী বলে। ভ্যান বা রিক্সাচালক, ঘরামি, কাঠমিস্ত্রি, ছাতা, লাইট, হারিকেন ইলেকট্রোনিক সামগ্রী মেরামতকারী, হাঁস-মুরগি পালন, গাভী পালন,.মৎস্য চাষ মানুষগুলো মূলত অকৃষিকাজে সম্পৃক্ত।
৪. দিনমজুর শ্রেণি : গ্রামীণ অর্থনীতিতে দু’ধরনের শ্রমসর্বস্ব মানুষ দেখা যায়। যেমন- (ক) ক্ষেতমজুর অর্থাৎ যারা অন্যের কৃষি ভূমিতে শ্রম প্রয়োগ বা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। (খ) দিনমজুর অর্থাৎ যারা কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজের বাইরে শ্রম বিনিয়োগ করে দৈনিক ভিত্তিতে তাদেরকে দিনমজুর বলে।
৫. ঐতিহ্যবাহী পেশা : গ্রামীণ সমাজে অকৃষি কাজের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী পেশা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ ধরনের পেশা বংশপরম্পরায় চলতে থাকে। কামার, কুমার, তাঁতি, ধোপা, স্বর্ণকার, কুলু, গোয়ালা ইত্যাদি শ্রেণির ব্যক্তিরা এর অন্তর্ভুক্ত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, একবিংশ শতাব্দীর গ্রামীণ সমাজ শুধু কৃষি নির্ভর নয়। অকৃষি খাতের সম্প্রসারণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আধুনিকায়ন, নগরায়ণ, শিল্পায়ন, শিক্ষার বিস্তার, গ্রাম-শহরের দূরত্ব হ্রাস, মানুষের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মূল্যবোধের পরিবর্তন ইত্যাদি গ্রামীণ জীবনে অকৃষি পেশাকে অনিবার্য করে তুলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!