অথবা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া আলোচনা করে এর সাথে কংগ্রেসের সম্পর্ক ও নিয়ন্ত্রণসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্ণয় পদ্ধতি সম্পর্কে কী জান?
অথবা, কংগ্রেসের সাথে প্রেসিডেন্টের সম্পর্ক ও নিয়ন্ত্রণসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তর: ভূমিকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন বিভাগের অধিকর্তা প্রেসিডেন্ট নামে পরিচিত। তত্ত্বগতভাবে যেমন রাষ্ট্রপতির হাতেই প্রশাসনিক সকল ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে, তেমনি আবার কার্যক্ষেত্রেও তিনি প্রশাসনিক প্রধান। ব্রোগানেয় মতে, “The position of the president of the United States is double. He is the formal head of the nation, He is also the effective head of the executive” সুতরাং, বুঝা যাচ্ছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট অসীম ক্ষমতার অধিকারী এবং তার কার্যাবলিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
রাষ্ট্রপতির নির্বাচন: সংবিধান অনুসারে মার্কিন রাষ্ট্রপতি একটি নির্বাচক সংস্থার দ্বারা নির্বাচিত হন। এ নির্বাচক সংস্থাটি গঠিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নাগরিকদের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে। প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের ১৮ বছরের ও তার বেশি বয়সের প্রত্যেক নাগরিক নির্বাচক সংস্থার প্রতিনিধি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। প্রত্যেক অঙ্গরাজ্য থেকে কংগ্রেস যতসংখ্যক সদস্য নির্বাচিত হন, সমসংখ্যক সদস্যকে অঙ্গরাজ্যের নির্বাচকমণ্ডলী এ নির্বাচক সংস্থায় নির্বাচিত করবে। এভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে যে পৃথক পৃথক নির্বাচন সংস্থা গঠিত হয়, তার যোগফল ৫৩৫। বর্তমানে ৩টি বেড়ে ৫৩৮টি হয়েছে। এ ৫৩৮ জন সদস্যের মধ্যে যিনি ২৭০টি ভোট পাবেন, তিনিই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। মার্কিন কংগ্রেসের যে কোন কক্ষের সদস্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোন কর্মচারী নির্বাচক সংস্থার সদস্য হতে পারে না।
নির্বাচন পদ্ধতি: নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবারের পর, প্রথম মঙ্গলবার নির্বাচক সংস্থার প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়। তারপর ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় বুধবারের পর প্রথম যে সোমবার আসে, সেদিন নির্বাচক সংস্থার সদস্যগণ নিজ নিজ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেন।সংবিধানের ২৩তম সংশোধনীর পর এখন নির্বাচক প্রতিনিধিগণ নিজ নিজ জেলায় উপস্থিত হয়ে রাষ্ট্রপতির নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন। রাজধানী ওয়াশিংটনে সিনেটের সভাপতি, কংগ্রেসের উভয় কক্ষের সদস্যদের সামনে ভোট বাক্স খোলা হয়। পরের বছর ৬ জানুয়ারি তারিখে এ ভোট গণনা করা হয়ে থাকে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে যিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট লাভ করেন, তিনিই রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হন। কোন ব্যক্তি যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, তাহলে উর্ধ্ব সংখ্যক ভোট প্রাপ্ত প্রথম তিনজনের মধ্যে একজনকে রাষ্ট্রপতি করা হয়। প্রতিনিধিসভার সদস্যগণ গোপন ভোটে এ নির্বাচন করেন। এক্ষেত্রে সংশিষ্ট তিনজন প্রার্থীর মধ্যে যিনি প্রতিনিধি সভার
সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের ভোট পান তিনিই রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতির যোগ্যতা:
(১) প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে।
(২) তাকে জন্মসূত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে।
(৩) অন্তত ১৪ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে হবে।
রাষ্ট্রপতির কার্যকাল ও পদচ্যুতি: মার্কিন রাষ্ট্রপতির কার্যকাল চায় বছর। পুনঃ নির্বাচন স্বীকৃত তবে পরপর দু’বারের বেশি নয়। বাষ্ট্রপতির স্বাভাবিক কার্যকাল শেষ হওয়ার পূর্বে তাঁর মৃত্যু হলে কিংবা দুর্নীতিমূলক কাজের জন্য প্রতিনিধি সভায় উত্থাপিত ‘ইমপিচমেন্ট’ সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য কর্তৃক অনুমোদন লাভ করলে এবং তিনি স্বয়ং কোন কারণে দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানালে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হবে এবং উপ-রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হবে।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মার্কিন রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি একটি জটিল প্রক্রিয়া অতিক্রম করে সম্পন্ন হয়। একটি নির্বাচক সংস্থা কর্তৃক বিশেষ পদ্ধতি অনুসারে পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিশ্বের শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে একটি অসাধারণ ঘটনা।