অথবা, একনায়কতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্র ও ব্যক্তির যোগসূত্র নির্ণয় কর ।
উত্তরঃ ভূমিকা : একনায়কতন্ত্রের ইতিহাস অতি প্রাচীন। খ্রিস্টপূর্ব সাত ও ছয় শতকে প্রাচীন গ্রিসে স্বৈরাচারতন্ত্রের মধ্যে এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সরকারের আধুনিক শ্রেণিবিভাজন অনুযায়ী গণতন্ত্রের বিপরীত সরকার ব্যবস্থা হচ্ছে একনায়কতন্ত্র। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালি, জার্মানি ও স্পেনে একনায়কতন্ত্রের জন্য হয় এবং বর্তমানেও এটি অনেক রাষ্ট্রে দেখা যায়।
১৭. এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্র ও ব্যক্তির সম্পর্ক : একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্র ও ব্যক্তির সম্পর্ক কোন দিক দিয়েই ইতিবাচক নয় বরং নেতিবাচক। একনায়কতন্ত্রে ব্যক্তি কিংবা ব্যক্তি জীবনের কোন মূল্য নেই। এতে মনে করা হয়, রাষ্ট্রের জন্য ব্যক্তি কিন্তু ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্র নয়। মুসোলিনীর ফ্যাসিবাদ এবং হিটলারের নাৎসীবাদের দিকে তাকালেই আমরা একনায়কতন্ত্রে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক কিরূপ হতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি। এখানে মনে করা হয় রাষ্ট্রের মর্যাদা গৌরব ও শক্তিবৃদ্ধিই মুখ্য। এ উদ্দেশ্য অর্জনের মধ্যেই ব্যক্তির কল্যাণ নিহিত । একনায়কতন্ত্রে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সরকারি কর্তৃপক্ষ ব্যক্তি ও সমাজজীকরনের যে কোন স্তরে হস্তক্ষেপ করতে পারে এখানে ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে কোন কিছুর স্থান নেই। ব্যক্তি এখানে রাষ্ট্রের আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হয়।একনায়কতন্ত্রে বাকস্বাধীনতা, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে না। জনমত এখানে মূল্যহীন। ব্যক্তিজীবনের সকল নিক এখানে রাষ্ট্রনায়কের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। ব্যক্তির সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল দিক রাষ্ট্রনায়কের খেয়ালখুশি নির্ভর । তাই রাষ্ট্রের কাছে ব্যক্তির কোন মূল্য এ শাসনব্যবস্থায় নেই।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি, একনায়কতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে গণতন্ত্রের একটি বিপরীত শাসনব্যবস্থা। ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, বিশ্বের কোন রাষ্ট্রেই একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জনগণকে শাস্তি বা স্বস্তি দিতে পারে নি। কোন না কোন পর্যায়ে এর বিলুপ্তি হয়েছে। বর্তমান শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানের যুগে যেখানে রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সর্বাধিক জনকল্যাণ নিশ্চিত করা, সেখানে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কখনও স্থায়ী হতে পারে না।