অথবা, সঠিক নির্বাচন না হওয়ার পিছনে কারণগুলো কী কী ?
উত্তর: ভূমিকা: প্রতিষ্ঠানে সঠিক কর্মী নির্বাচন করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা সম্ভব:
যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা পরীক্ষা: আপনার চাহিদামুক্ত পদে কর্মী নির্বাচনে প্রাথমিক প্রয়োজনীয় যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা পরীক্ষা আয়োজন করতে পারেন।
সাক্ষরতা পরীক্ষা: আপনি প্রতিষ্ঠানের যারা আবেদন করছেন, তাদের সাক্ষরতা পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব এবং কর্মীদের সাক্ষরতা স্তর মোতাবেক নির্ধারণ করা যায়।
পর্যায়ক্রমিক ইন্টারভিউ: উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মী নির্বাচনের সাথে সাথে একটি ইন্টারভিউ পরীক্ষা সম্পন্ন করা যেতে পারে।
সাধারণ চরিত্র বিশ্লেষণ: কর্মীর চরিত্র এবং সাধারণ গুণমান বিশ্লেষণের মাধ্যমে যাদের সঠিক প্রোফাইল প্রদান করতে পারে, তাদের নির্বাচন করা যেতে পারে।
শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সঠিক কর্মী নির্বাচন সম্ভব কি না : মনোবিজ্ঞানিগণ সর্বদা সঠিক বা উপযুক্ত কর্মী নির্বাচনের পক্ষে কাজ করলেও নানা কারণে সঠিক কর্মী নির্বাচন সম্ভব হয় না। সঠিক নির্বাচন না হওয়ার পিছনে মনোবিজ্ঞানিগণ যেসব কারণ উল্লেখ করেছেন নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো :
১. নিয়োগ ও কাজের ভিন্নতা : প্রকার প্রকৃতিতে এক হলেও অনেক সময় সব কাজ এক রকমের হয় না। আবার পদের নাম একই হলেও উক্ত পদে নিযুক্ত কর্মচারীদের একেক প্রতিষ্ঠানে একেক রকম কাজ করতে হয়। যেমন- কোনো প্রতিষ্ঠানে করণিক এর দ্বারা মুদ্রাক্ষরিক অথবা সাঁটলিপিকারের কাজ করানো হয়।
২. খালি পদ ও আবেদনকারীর সংখ্যার ব্যবধান : খালি পদের সংখ্যার চেয়ে যদি দরখাস্তকারীর সংখ্যা বেশি হয়, তবে সঠিক কর্মী নির্বাচন সম্ভব হয়। অর্থাৎ উপযুক্ত কর্মী নির্বাচন নির্ভর করে নির্বাচন অনুপাতের ওপর। কর্মী নির্বাচন অনুপাত বের করার সূত্রটি হল SR = . এখানে SR = নির্বাচন অনুপাত, N = n আবেদনকারীর সংখ্যা, n = খালি পদের সংখ্যা। খালি পদের সংখ্যার চেয়ে আবেদনকারীর সংখ্যা যতবেশি হবে তত উপযুক্ত বা সঠিক কর্মী নির্বাচন সম্ভব হবে। নির্বাচন অনুপাত যদি সমান হয়, অর্থাৎ খালি পদের সংখ্যা এবং আবেদনকারীর সংখ্যা সমান হলে নির্বাচন সঠিক হয় না। কারণ তখন কাউকে বাদ দেওয়ার সুযোগ থাকে না ।
৩. কয়েকজন প্রার্থীর সমান যোগ্যতা : সঠিক কর্মী নির্বাচনের আরেকটি বড় বাধা হলো কয়েকজন প্রার্থীর সমান যোগ্যতা। যেমন- কয়েকটি কাজের জন্য আবেদন করা আবেদনকারীদের অভীক্ষা প্রদান করে তা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেল যে, তাদের মধ্যে কয়েকজন কাজে সমান দক্ষতা দেখাতে পারে। তাই বলে একজন ব্যক্তিকে তো আর একাধিক কাজে নিয়োগ করা যায় না। ফলে অনেক সময় অপেক্ষাকৃত কম দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে কাজে নিয়োগ করতে হয়।
৪. সচিব নির্বাচন : অফিসের সচিব নির্বাচন করার পদ্ধতি যদি বাইরে কাজ করবে এমন সচিব নির্বাচন করার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, তবে সে নির্বাচন সঠিক হবে না। কারণ বাইরে কাজ করা সচিবের যে গুণাবলির দরকার সেগুলো ঐ নির্বাচন ব্যবস্থার মাধ্যমে জানা সম্ভব নয়। ফলে বিশুদ্ধ নির্বাচন করা সম্ভব হয় না ।
৫. কোটা নির্ধারণ : অনেক সময় কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ব্যাপারে কোটা নির্ধারিত থাকে বলে সঠিক বা বিশুদ্ধ নির্বাচন সম্ভব হয় না। যেমন- বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, শিক্ষায় অনুন্নত অঞ্চল, কোন বিশেষ জাতি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা নির্ধারিত থাকে। এসব ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রার্থীর তুলনায় কম যোগ্যতাসম্পন্ন হয়েও কর্মচারীরা কোটাভিত্তিক নিয়োগ অর্জন করে। এতে করে সঠিক বা বিশুদ্ধ নির্বাচন দারুণভাবে ব্যাহত হয় ।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যদিও শিল্প মনোবিজ্ঞানিগণ বিশুদ্ধ তথা সঠিক নির্বাচনের জন্য সবসময় সচেষ্ট থাকেন, তবু উপরে উল্লিখিত সীমাবদ্ধতার কারণেই বহু ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ নির্বাচন সম্ভব হয় না। তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞাানগণ নির্বাচনি সিদ্ধান্তে ভুলের পরিমাণ বহুলাংশে কমাতে সক্ষম।