“মনোবিজ্ঞান একটি আচরণ বিজ্ঞান”- সংক্ষেপে লিখ।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, মনোবিজ্ঞানকে আচরণ সম্পর্কীয় বিজ্ঞান বলা হয় কেন? উত্তরা:

ভূমিকা : মনোবিজ্ঞান হলো আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার বিজ্ঞান। আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়া নিয়েই মানবজীবন। মানুষকে জানতে হলে তার আচরণ ও মানসিক কার্যকলাপ বুঝতে হবে। আর মানুষের আচরণ ও মানসিক কার্যকলাপ বুঝতে হলে মনোবিজ্ঞান সম্বন্ধীয় জ্ঞানের প্রয়োজন। দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হই। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান খুবই প্রয়োজন।

মনোবিজ্ঞান একটি আচরণ বিজ্ঞান : মনোবিজ্ঞানকে খার আচরণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান হিসেবে বলা হয়েছে। বিশেষ করে আচরণবাদী মনোবিজ্ঞানীগণ মনোবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও স্বরূপ বিশ্লেষণের জন্য এর মূল বিষয়বস্তু হিসেবে ব্যক্তির আচরণকে বেছে নিয়েছে। মানুষ যেহেতু জড় ও অচেতন প্রাণী নয়, তাই সে সুনির্দিষ্ট আচার-আচরণে লিপ্ত হয়। সুতরাং মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ করেই তার মানসিক অবস্থা ও ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা যায়। মনোবিজ্ঞান এ কারণে ব্যক্তির আচরণকে তার মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা নির্ণয়ের জন্য মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করে। মনোবিজ্ঞান বলতে সাধারণভাবে মানুষের মন, চেতনা, চিন্তা, আত্মা ইত্যাদি সম্পর্কিত বিজ্ঞানকে বুঝায়। কিন্তু মানুষের মন সম্পর্কে জানা কিংবা সঠিকভাবে এর বিচার বিশ্লেষণ করা মোটেই সহজ কাজ নয়। মনের প্রকৃতি ও বিষয়বস্তু বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে নির্ধারণ করাও সম্ভব হয় না। মানুষের মন সর্বদাই একটি গভীরতম এবং ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের আওতা বহির্ভূত জটিল বিষয় হিসেবে গণ্য হয়েছে। মনেরঅবস্থা জানা বা বিচার বিশ্লেষণ করার জন্য মনোবিজ্ঞানীগণ তাই মানুষের আচরণকে অধ্যয়ন করেন। আচরণ হচ্ছে মানুষের মনের অবস্থার বাহ্যিক প্রতিফলন। মানুষ যখন মনের দিক থেকে উৎফুল্ল থাকে, তখন তার আচরণের মধ্য সেই উৎফুল্লভাব প্রকাশ পায়। অনুরূপভাবে, মানুষ যখন মনের দিক থেকে বিমর্ষ বা দুঃখিত হয় তখনও তার আচরণের মধ্যে সেই বিমর্ষভাব প্রতিফলিত হয়ে থাকে। যেহেতু মানুষের মনের সঠিক অবস্থা আচরণ থেকে বুঝা যায় তাই মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মনকে অধ্যয়নের জন্য আচরণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। মানুষের মন সর্বদা একটি অতি জটিল প্রক্রিয়া। বিজ্ঞানসম্মতভাবে মনকে জানা কিংবা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু আচরণ হচ্ছে মনের প্রতিফলন এবং মানুষের প্রতিটি আচরণকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়। মানুষ যে আচরণ করে, সে আচরণ সঠিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করতে পারলে তার মন সম্পর্কে জানা সম্ভব। যেহেতু আচরণ নির্ধারণ ও ব্যাখ্যা করা সহজ। মনোবিজ্ঞানে তাই আচরণকে মূল বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়। এজন্য আচরণবাদী মনোবিজ্ঞানীগণ মনোবিজ্ঞানকে আচরণ বিজ্ঞান বলার প্রয়াস পেয়েছে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যক্তির মন বা মনের অবস্থা জানা খুব কঠিন। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত কোন নিয়ন- নীতি বা সূত্র ব্যাবহার করা যায় না। কিন্তু মানুষের প্রতিটি আচরণে তার মনের অবস্থা প্রকাশ পায় এবং আচরণ বিচার বিশ্লেষণ করে তার মনোস্তত্ত্ব জানা যায়। তাছাড়া আচরণ বিশ্লেষণ করা সহজ এবং এক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত নীতি, নিয়ম কিংবা সূত্র ব্যবহার করা সম্ভব। মনোবিজ্ঞান তাই মানুষের মনকে জানার জন্য আচরণকে অধ্যয়ন করে এবং এ কারণেই মনোবিজ্ঞান হলো মানুষের আচরণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান।