অথবা, চাহিদা কাকে বলে? একটি শিশুর চাহিদাসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, চাহিদা কাকে বলে? শিশুর যে সকল চাহিদা অনুভব হয় সেগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, চাহিদার সংজ্ঞা দাও। একটি শিশুর মৌলিক চাহিদাগুলো বর্ণনা দাও।
অথবা, চাহিদা ধারণাটি ব্যাখ্যা কর। শিশুর চাহিদাগুলো বিস্তারিত বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানুষ সামাজিক জীব। শুধু তাই নয় মানুষ হল সৃষ্টির সেরাজীব। তাই মানুষ বেঁচে থাকা ও তার জীবন বিকাশে কিছু কিছু জিনিসের প্রয়োজন অনুভব করে। অর্থাৎ মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে ও জীবন বিকশিত করতে গেলে অত্যাবশ্যকীয় কিছু জিনিসের প্রয়োজন। এসব অত্যাবশ্যকীয় জিনিস বা বিষয়কেই চাহিদা বলা হয়ে থাকে।শিশুরাও মানুষ। তাদের জীবন ধারণ, বেঁচে থাকা ও সুষ্ঠুভাবে বেড়ে উঠার জন্য কতিপয় জিনিসের প্রয়োজন হয়। এসব জিনিস ছাড়া শিশুরা সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে ও জীবনধারণ করতে পারে না।
চাহিদা : আগেই বলা হয়েছে মানবজীবনের জন্য অপরিহার্য ও অত্যাবশ্যকীয় বিষয়ই হল চাহিদা। অর্থাৎ জীবন ধারণ করতে মানুষ যার অভাব বোধ করে তাই চাহিদা।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : চাহিদা সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে তাঁদের মতামত ব্যাখ্যা করেছেন। নিয়ে তাঁদের কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল :
Social Work Dictinary তে চাহিদার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে, “Social work dictionary define needs as physical, psychological,economical, cultural and social requirements for survival.wellbeing and fulfillment.” অর্থাৎ, সমাজকর্ম অভিধান চাহিদাকে সংজ্ঞায়িত করেছে দৈহিক, মনস্তাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক উপাদানসমূহ হিসেবে যা বেঁচে থাকার জন্য পূরণ করা অত্যাবশ্যক।
সুতরাং উপরের আলোচনা হতে একথা বলা যায় যে, চাহিদা হল এমন কিছু সামাজিক, আবেগীয়, অর্থনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ যা মানবজীবনে একান্তভাবে পূরণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
শিশুর চাহিদা : একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হবার পর হতে বেড়ে ওঠা ও পূর্ণাঙ্গ বিকাশের জন্য কিছু কিছু জিনিসের প্রয়োজন। এগুলোকে শিশুর চাহিদা বলা হয়ে থাকে। নিম্নে একটি শিশুর চাহিদাসমূহ আলোচনা করা হল :
১. নিরাপদ জন্য : শিশুর প্রথম চাহিদা হল নিরাপদে জন্ম গ্রহণ করা। শিশু জন্ম গ্রহণ যদি নিরাপদে ও যত্নের সাথে না হয়, তবে পরবর্তীতে শিশুর বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। তাই শিক্ষিত ও ট্রেনিংপ্রাপ্ত ডাক্তার বা নার্সের মাধ্যমে নিরাপদে জন্মগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. পরিচর্যা : নিরাপদে জন্ম লাভের পরপরই শিশুর জন্য পরিচর্যার দরকার হয়। কারণ সঠিকভাবে পরিচর্যা করা না।হলে শিশুর নানারোগ ব্যাধি হতে পারে এমনকি শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। তাই শিশুর পরিচর্যার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
৩. শিশু খাদ্য : এরপর আসে শিশুর খাদ্যের বিষয়টি। শিশুর জন্য উপযুক্ত পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।শিশুর খাদ্যের উপরই তার বিকাশ অনেকাংশে নির্ভর করে। খাদ্যের অভাবে শিশুর বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।
৪. পানীয় : শিশুর জন্য বিশুদ্ধ পানীয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা পানীয় শিশুর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।পানি ছাড়া শিশু বাঁচতে পারে না।
৫. শিশুর নাম : একটি ভালো ও সুন্দর নাম শিশু চাহিদার মধ্যে পড়ে। শিশুর নাম না রাখলে সে সমাজে কি হিসেবে পরিচিত হবে।তাই সুন্দর নাম রাখা শিশুর অধিকার।
৬. বাসস্থান : বাসস্থান শিশুর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। তবে বাসস্থান হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন যেখানে শিশু নিরাপদে অবস্থান করতে পারবে।
৭. পোশাক : পোশাক পরিচ্ছদও শিশুর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও আরামদায়ক পোশাক শিশুর অন্যতম চাহিদা। তাই শিশুকে পোশাক পরিচ্ছদ সরবরাহ করতে হবে।
৮. চিকিৎসা : চিকিৎসা শিশুর অন্যতম চাহিদা। কোন রোগ হলে তার উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সরবরাহ করতে হবে।
৯. নিরাপত্তা : নিরাপত্তা শিশুর অন্যতম চাহিদা। শিশু যদি নিরাপত্তাবোধ না করে তাহলে সে সুষ্ঠুভাবে বেড়ে উঠতে পারবে না। তাই প্রত্যেক বাবা মার উচিৎ শিশুর উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
১০. স্নেহ ভালোবাসা : স্নেহ ভালোবাসা প্রাপ্তি শিশুর অন্যতম চাহিদা। বাবা, মা, ভাইবোনসহ বয়োজেষ্ঠদের নিকট হতে স্নেহ ভালোবাসা পাবার আশা করে শিশু। বড়রা শিশুদের স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে থাকে।
১১. সেবাযত্ন : শিশুরা অসহায়। তাই তাদের প্রয়োজনীয় সেবা যত্ন প্রাপ্তি তাদের অধিকার। বাবা মাকে শিশুর সেবাযন্ত্রের ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা সেবাযত্নের অভাবে শিশুর বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।
১২. সামাজিকীকরণ : সামাজিকীকরণ শিশুর অন্যতম চাহিদা। ছোট শিশু কিছুই জানেনা। সে বাবা মা ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করে। সমাজের সবার সাথে মিশে সে সামাজিক হয়ে উঠে।
১৩. শিক্ষা : শিক্ষা একটি শিশুর গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। কেননা শিক্ষা ছাড়া শিশু উপযুক্ত মানুষ হতে পারবে না। তাই প্রত্যেক বাবা মার উচিৎ তার শিশুকে উপযুক্ত শিক্ষা দান করা। শিক্ষার মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা, ধর্মীয়, শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষা ইত্যাদি রয়েছে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা হতে এ কথা বলা যায় যে, শিশুরাও মানুষ। সমাজের নবীন সদস্য হিসেবে বেঁচে থাকা ও সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠা ও বিকাশের জন্য তাদের যেসব জিনিস প্রয়োজন হয় তাই তাদের চাহিদা। এসব চাহিদাসমূহ পূরণ করা বাবা মা ও শিশুর অভিভাবকদের জন্য অতীব জরুরি। কারণ এসব চাহিদার অভাবে শিশুর বিকাশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে যা তার ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর।