উত্তর : ভূমিকা : পার্থিব সকল প্রকার মায়া-মমতা ও বন্ধনকে ছিন্ন করে অনন্ত অসীমের সাথে মিলনের গোপন অভিসার। আত্মশুদ্ধি ও নৈতিক শৃঙ্খলার মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য ইসলামে যে মরমি ভাবধারার উৎপত্তি হয় এই সুফিবাদ। সকল ভালো বৈশিষ্ট্যগুলো সুফিবাদে বর্তমান। মানব জীবনের একটি আধ্যাত্মিক পথ সুফিবাদ ।
সুফিবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ : সুফিবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো :
১. নিঃশর্ত আল্লাহর পথের প্রচেষ্টা : জীবন বিধানের ব্যাপারে একত্বের ধারণার স্বাভাবিক পরিণতি ছিল ইসলাম ধর্মকে অনৈসলামিক সমাজও এদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার দুর্দমনীয় আকাঙ্ক্ষা। সে লক্ষ্যে সহায়-সম্পত্তি, দেশ, পরিবার-পরিজন, এমনকি নিজের জীবনকে পর্যন্ত অকাতরে বিলিয়ে দেওয়ার মানসিকতা। তাদের বিবেচনায় এ সমস্ত কাজ ছিল সর্বোচ্চ ধর্মীয় কাজ এবং সে কারণে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের শ্রেষ্ঠ পথ নামাজ, রোজা, জিকির-আজকার, মোরাকাবা, মোশাহাদ ইত্যাদি কাজই প্রস্তুত করার রুহামী হাতিয়ার।
২. মানবতার মমত্ববোধ : সুফি-দরবেশরা নিপীড়িত ও অধিকার বঞ্চিত মানুষকে ভালোবাসেন। এদের জন্য তারা দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল ও সুদূর পাড়াগাঁয়ে বসতি স্থাপন করেন। এরা সাধারণ মানুষের মতই জীবন-যাপন করেন এবং সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিয়েছেন। সুফিদের এসকল মানবতাবাদী ও সেবামূলক কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেক ভিন্ন ধর্মাবলম্বীই ইসলামের সুশীতল
ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন ।
৩. জীবন পরিচালনায় একত্বের ধারণা : যেসকল সুফি সাধক বাহির হতে এসে এদেশে বসবাস শুরু করেন ও এদেশের যারা তাদের নিকট দিক্ষা নিয়েছেন তারা মানুষের জীবনের সফলতা ও রকালীন যুক্তি একমাত্র ইসলাম ধর্মে আছে একথা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন। এটি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচরণের মূল চালিকাশক্তি ।
৪. মানবাত্মার প্রকৃতি : বেদান্ত দর্শনের অনেক সুফি মানবাত্মাকে আক্ষরিক অর্থে পরমাত্মার অংশ বলে মনে করতে থাকেন। আল্লাহ মানুষের মধ্যে তার আত্মা ফুঁকে দিয়েছেন। এ মর্মে কুরআন শরীফে একটি আয়াতের ব্যাখ্যাকে কেন্দ্র করে অনেকে এ মতের পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকেন।
৫. শিক্ষা বিস্তার : বিচ্ছিন্নভাবে ইসলাম প্রচারের সাথে সাথে সুফিরা মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দানের জন্য মসজিদ, মাদ্রাসা, ও মানকাহ প্রতিষ্ঠা করেন। এটিকে তারা ধর্মীয় কাজের অংশ মনে করতেন।
উপসংহার : উপরিউক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে একথা বলা যায় যে, সুফিদর্শন মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতিতে বিশ্বাসী। মানুষকে আল্লাহর প্রেমের পথে পরিচালিত করার জ্ঞান দানে তারা উদ্বুদ্ধ ছিল। আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি প্রেম, ভ্রাতৃত্ববোধ, শিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে সুফিরা মানুষকে সচেতন করতেন। সুফিরা শিক্ষা বিস্তারে অগ্রগণ্য ছিল। সুফিবাদ বাংলাদেশে প্রেম-দর্শন প্রচারের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।