অথবা, গবেষণা নকশার প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য আলোচনা কর।
অথবা, গবেষণা নকশার বৈশিষ্ট্য উল্লেখপূর্বক এর উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা কর ।
অথবা, গবেষণা নকশার বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী? গবেষণা নকশার উদ্দেশ্যসমূহ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : কোনো কাজকে সফল করতে হলে একটা সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে তা করতে হয় । তাই সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রেও নকশা প্রণয়ন অতি জরুরি গবেষণার বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে নকশা তৈরি করতে হয়, নকশার উপর বেশ নির্ভর করে গবেষণার সফলতা।
একটি উত্তম গবেষণা নকশার বৈশিষ্ট্য : একটি উত্তম গবেষণা নকশায় সাধারণত নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমান থাকে । যেমন-
১. সঠিক উপাত্ত সংগ্রহের উপযোগী : একটি উত্তম গবেষণা নকশা গবেষণাধীন বিষয় বা সমস্যা সম্পর্কিত সঠিক উপাত্ত সংগ্রহের উপযোগী হতে হবে। কেননা সঠিক উপাত্তের উপরই গবেষণার সাফল্য নির্ভর করে। তাই গবেষণার উদ্দেশ্যকে সফল করে তোলার জন্য উত্তম গবেষণা নকশাকে সঠিক উপাত্ত সংগ্রহের উপযোগী হওয়া আবশ্যক ।
২. নমনীয় : উত্তম গবেষণা নকশা অবশ্যই নমনীয় প্রকৃতির হবে। ফলে গবেষণার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রস্তুতকৃত গবেষণা নকশাটি কার্যক্ষেত্রে বা ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে গিয়ে গবেষক অনেক সময় তাতে কিছু প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধন করতে সক্ষম হবেন।
৩. পূর্বানুমান পরীক্ষার ক্ষমতা : একটি উত্তম গবেষণা নকশা অবশ্যই গবেষণার জন্য গৃহীত পূর্বানুমানকে বস্তুনিষ্ঠভাবে যাচাই বা পরীক্ষার ক্ষমতা থাকতে হবে। কেননা সামাজিক গবেষণার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পূর্বানুমান গ্রহণের মাধ্যমে গবেষণাকার্য পরিচালিত হয়। তাই উত্তম গবেষণা নকশাকে গবেষণার জন্য গৃহীত পূর্বানুমানটিকে বস্তুনিষ্ঠভাবে পরীক্ষা বা যাচাই করে সেটি গ্রহণ বা বর্জন করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
৪. স্থায়ী. ভুল সংশোধন : একটি উত্তম গবেষণা নকশা গবেষণার জন্য সংগৃহীত উপাত্তের স্থায়ী ভুল (Constant error) সংশোধনের উপযোগী হবে। কেননা পরীক্ষণমূলক গবেষণার ক্ষেত্রে বাহ্যিক চলককে (External variable) নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলেও সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে বাহ্যিক চলক অনেক সময়ই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। ফলে গবেষণার জন্য সংগৃহীত উপাত্তের স্থায়ী ভুলের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু গবেষণা নকশা সুষ্ঠুভাবে প্রণীত হলে উপাত্তের এ ধরনের স্থায়ী ভুলের সম্ভাবনা হ্রাস পায় ।
৫. দৈব ভুল হ্রাস : উত্তম গবেষণা নকশায় এমন বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে, যাতে সংগৃহীত উপাত্তের দৈব ভুল (Random error) কম হয় এবং এ ভুলের পরিমাণ নির্ণয় করা যায় । কোন বিষয় বা সমস্যা অনুসন্ধানে দৈব ভুলের উদ্ভব হয় প্রধানত গবেষকদের ব্যক্তিগত পার্থক্য এবং নানারকম অজ্ঞাত শর্তের (Unknown condition) প্রভাবে। এ ধরনের ভুল সম্পূর্ণরূপে দূর করা সম্ভব না হলেও গবেষণা নকশা সঠিকভাবে প্রণীত হলে অনেক ক্ষেত্রে এর পরিমাণ হ্রাস করা যায় এবং পরিমাপ করা যায় ।
৬. গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কিত : একটি উত্তম গবেষণা নকশাকে অবশ্যই গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কিত হতে হবে। অন্যথায় গবেষণা নকশার গ্রহণযোগ্যতা (Validity) হ্রাস পায়। ফলে গবেষণার মূল উদ্দেশ্যও ব্যাহত হয় । তাই উত্তম গবেষণা নকশাকে গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কিত হওয়া বাঞ্ছনীয় ।
৭. সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের নির্দেশনা : একটি উত্তম গবেষণা নকশায় গবেষণার জন্য প্রাপ্ত সম্পদের সুষ্ঠু ও সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গবেষণা কাজটি সম্পাদনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। অন্যথায় গবেষণা কাজটিতে অধিক সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় হবে, যা কাম্য নয় ।
গবেষণা নকশার উদ্দেশ্য : গবেষণা নকশার প্রধান উদ্দেশ্য উপস্থাপিত প্রশ্নের উত্তর প্রদান । নিম্নে গবেষণা নকশার উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা
করা হলো :
১. গবেষণার প্রশ্নগুলোর উত্তর সরবরাহ : গবেষণা নকশার মৌলিক উদ্দেশ্য হলো গবেষণায় উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর নির্ভুল উত্তরদান । অর্থাৎ গবেষণায় কি পর্যবেক্ষণ করতে হবে, কিভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, সংগৃহীত উপাত্তের উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ কিভাবে করতে হবে ইত্যাদি সম্পর্কে দিকনির্দেশনা গবেষণা নকশা থেকে আমরা পেয়ে থাকে ।
২. চলকগুলোর নিয়ন্ত্রণ করা : গবেষণা নকশার একটি প্রধান উদ্দেশ্য হলো গবেষণায় ব্যবহৃত চলকগুলো নিয়ন্ত্রণ করা । কেননা চলকগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে গবেষণার জন্য সংগৃহীত উপাত্তের স্থায়ী ভুলের সম্ভাবনা থেকে যায়। – ফলে গবেষণার প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় ।
৩. গবেষণার ত্রুটি চিহ্নিতকরণ : গবেষণা নকশা প্রণয়নের মাধ্যমে গবেষণা কাজ শুরুর পূর্বেই প্রকৃত কাজের একটি সামগ্রিক প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। ফলে প্রকৃত গবেষণা কাজ শুরুর পূর্বেই গবেষণা নকশার সাহায্যে গবেষণা কাজের সম্ভাব্য ত্রুটি বা অস্পষ্টতা চিহ্নিত করা যায় এবং ঐসব ত্রুটি বা অস্পষ্টতা দূরীকরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও গ্রহণ করা যায় । তাই বলা যায়, গবেষণার সম্ভাব্য ত্রুটি চিহ্নিতকরণ ও সংশোধন গবেষণা নকশার অন্যতম উদ্দেশ্য।
৪. কার্যকরণ সম্পর্ক নির্ণয় : গবেষণা নকশার অপর একটি প্রধান উদ্দেশ্য হলো গবেষণাধীন বিভিন্ন চলকের মধ্যকার কার্যকরণ সম্পর্ক (Causal relations) নির্ণয় করতে গবেষককে সহায়তা করা।
৫. যৌক্তিক সিদ্ধান্ত : গবেষণা নকশার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো গবেষণার জন্য সংগৃহীত গ্রহণযোগ্য, বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক উপাত্তগুলোর পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণের (Statistical analysis) মাধ্যমে গবেষণা সম্পর্কে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে গবেষককে সহায়তা করা ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে এটা বলা যায় যে, গবেষণায় ভালো ফলাফলের জন্য একটি উত্তম গবেষণা নকশা অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণার ধরন ও প্রকৃতি অনুযায়ী গবেষণা নকশার ধরন ও প্রকৃতি তৈরি হবে, যাতে গ্রহণযোগ্য ও সর্বজনগ্রাহ্য একটা সিদ্ধান্ত বা ফলাফল লাভ করা যায়।