পরীক্ষণ নকশার প্রকারভেদ উল্লেখপূর্বক পরীক্ষণ গবেষণার শ্রেণিবিভাগ ব্যাখ্যা কর।

অথবা, পরীক্ষণ নকশাও পরীক্ষণ গবেষণার শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।
অথবা, পরীক্ষণ গবেষণা ও পরীক্ষণ নকশার প্রকারভেদ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
একজন গবেষক তাঁর কাজের সুবধিার জন্য যে পরিকল্পনা তৈরি করেন তাকেই গবেষণা নকশা বলে। কোন কাজকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে একটা সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে প্রয়োজন পরিকল্পিত ব্যবস্থা, তাকে নকশা বলে অভিহিত করা যায়। নকশা ছাড়া গবেষণা সঠিকভাবে কার্যকর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে না। তাই বলা যায়, গবেষণার সফলতা নকশার উপর অনেকাংশ নির্ভরশীল দায়িত্ব পালন করে থাকে ।
গবেষণা নকশার প্রকারভেদ : সুষ্ঠু ও সঠিক গবেষণার নিমিত্তে গবেষণা নানা ক্ষেত্রে নানা রকম হয়ে থাকে । যথা :
১. পরীক্ষামূলক নকশা : পরীক্ষামূলক নকশায় সুনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় একটি চলকের উপর অন্য একটি চলকের প্রভাব নিরূপণ করা হয় এবং উভয় চলকের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করা হয়। এজন্য পরীক্ষামূলক নকশাকে সবচেয়ে সঠিক নকশা হিসেবে বিবেচনা করা হয় ।
২. আপাত-পরীক্ষামূলক নকশা : আপাত-পরীক্ষণমূলক নকশায় অভ্যন্তরীণ যথার্থতা সঠিক পরীক্ষণমূলক নকশার তুলনায় খানিকটা বেশ দুর্বল । কিন্তু এর সাহায্যে অপরীক্ষামূলক নকশার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশিমাত্রায় অভ্যন্তরীণ যথার্থতা রক্ষা সম্ভব হয়। এ নকশার মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীদেরকে বিভিন্ন শর্তে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বিন্যস্ত না করে । নিয়মতান্ত্রিক পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারীদেরকে কবিতার বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ করা হয় এবং পরবর্তীতে একটি নির্ভরশীল চলকের পরিমাপের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের তুলনা করা হয় ।
৩. অপরীক্ষামূলক নকশা : বর্ণনামূলক তথ্য সংগ্রহ করা অথবা বিশেষ কোনো পরিস্থিতির উপর ছোট আকারের জীবন ইতিহাসে পর্যালোচনা করার জন্য সামাজিক গবেষকরা অনেক সময়ই অপরীক্ষামূলক নকশা ব্যবহার করে থাকেন । এ জাতীয় গবেষণা রীতিসিদ্ধ পর্যবেক্ষণ, প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি বিভিন্ন নামে পরিচিত । সুতরাং বলা যায় যে, পরীক্ষণ হলো একটি নিয়ন্ত্রিত অধীন চলকের উপর স্বাধীন চলকের পরিবেশে কতটুকু প্রভাব পড়েছে তা নিরূপণ করা ।
পরীক্ষণ গবেষণার প্রকারভেদ : বিভিন্ন গবেষক বিভিন্ন মতামতের মাধ্যমে পরীক্ষণ গবেষণাকে ভাগ করেছেন । এখানে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. লিন্ডকুইস্ট পরীক্ষামূলক গবেষণাকে ৬ ভাগে ভাগ করেছেন । যথা :
ক. সরল দৈবচয়িত নকশা : এ নকশা পরীক্ষণীয় চলের প্রতিটি মাত্রা আলাদা আলাদা নমুনা চলের উপর পুরোপুরিভাবে প্রয়োগ করে থাকে ।
খ. উপাদানভিত্তিক নকশা : উপাদানভিত্তিক নকাশার দুই বা তার অধিক পরীক্ষণীয় চলের প্রভাব ও পারস্পরিক ক্রিয়া যুগপৎভাবে লক্ষ্য করা যায় ।
গ. দৈবচয়িত পুনরাবৃত্তিমূলক নকশা : নানারকম পুনরাবৃত্তিতে ব্যবহৃত পরীক্ষণ পাত্র একই সামগ্রিক হতে নেয়া যেতে পারে এবং প্রত্যেক পুনরাবৃত্তির পরীক্ষণ বা দৈবচয়ন পদ্ধতিতে একটি ভিন্ন ও দৈবচয়িতভাবে নির্বাচিত উপসামগ্রিক থেকে নেয়া যেতে পারে।
ঘ. পরীক্ষণীয় চলের স্তরভিত্তিক নকশা : নির্ণায়কের সাথে সম্পর্কিত চলের প্রেক্ষিতে তুল্য নকশা দলগুলোর উপর নানাবিধ পরীক্ষণীয় চলের মাত্রা প্রয়োগ করে।
ও. আন্তঃদলীয় বহুমাত্রিক নকশা : এ নকশা সমগ্র থেকে বহুসংখ্যক পরিমেয় দান নিয়ে গঠিত বা অনুধ্যানের আওতাধীনে পড়ে ।
চ. পরীক্ষণীয় চলের বিভিন্ন মাত্রা এবং অভিন্ন পরীক্ষণ পাত্রের নকশা : পরীক্ষণীয় চলের সমস্ত মাত্রা একই পরীক্ষণ পাত্রের উপর ক্রমান্বয়ে প্রয়োগ করা হয়।
২. উইল কিনসন ও ভানদারকার এর মতে, পরীক্ষণমূলক নকশা দুই প্রকার। যথা :
ক. অভীক্ষা উত্তর যাচাই মাত্রা নকশা : এখানে পরীক্ষণীয় ব লে নিয়মিত এবং পরীক্ষণ উন্মুক্ত করার পরবর্তীতে মাত্রা নির্ভরশীল চলের পরিমাপ নেয়া হয়।
খ. পূর্বাপর যাচাই নকশা : এখানে দল বা দলসমূহকে পরীক্ষণীয় বলে উন্মুক্ত করার পূর্বে এবং পরে নির্ভরশীল চলের পরিমাপ নেয়া হয়ে থাকে ।
৩. ম্যাকগুইগান এর মতে, পরীক্ষণমূলক নকশা ৫ প্রকার । যথা :
ক. দৈবচয়িত দ্বি-দলীয় নকশা : কোনো অনির্ভরশীল চল নির্বাচনের পর গবেষক যখন কোনো আচরণের উপর নির্ভরশীল চলের দুটি মাত্রা প্রয়োগ করে দেখতে চান যে, অনির্ভরশীল চলের দুটি মাত্রা সংশ্লিষ্ট আচরণকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।
খ. তুল্য দ্বি-দলীয় নকশা : পরীক্ষণে অংশগ্রহণকারী দৈবচয়িতভাবে দুটি দলে ন্যস্ত করায় দুটি সমদল পাওয়া যাবে, যা দুদলীয় নকশায় ধরে নেয়া হয় ।
গ. দৈবচয়িত বহুদলীয় নকশা : কোনো পরীক্ষণে যখন তিন বা তার বেশি শর্ত থাকে অথবা যখন তিন বা তার বেশি চলকে পরীক্ষণ পাত্রের উপর প্রয়োগ করা হয় তখন বহুদলীয় নকশা ব্যবহার করা হয় ।
ঘ. উপাদানভিত্তিক নকশা : এ নকশা হলো দুই বা ততোধিক অনির্ভশীল চলের প্রবাব অনুসন্ধানের একটি নকশা ।
ও. আæদলীয় নকশা : আন্তঃদলীয় নকশায় ভিন্নভাবে ব্যবহৃত দলগুলোর মাছে নির্ভরশীল চলে সাফল্যের তুলনা করা হয়। এতে নির্ভরশীল চলেরই দুই বা ততোধিক মাত্রা একই পরীক্ষণ পাত্রে ক্রমান্বয়ে প্রয়োগ করা হয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গবেষণা নকশার বিভিন্ন প্রকার সম্পর্ক ধারণা লাভ করা যায় । গবেষণাকে সঠিক ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এ ধরনের শ্রেণিবিভাগ একান্ত প্রয়োজন। সে কারণে গবেষণা নকশায় শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে ধারণা থাকা একান্ত আবশ্যক।