উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ অপরাধীকে নয় অপরাধকে ঘৃণা কর এ দার্শনিক ভিত্তির আলোকে পরিচালিত হয় সংশোধনমূলক
কার্যক্রম। যার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা হলো প্রবেশন ব্যবস্থা। অপরাধ ও অপরাধীর সংখ্যা নিত্যদিন বেড়েই চলেছে। দারিদ্র্য, অভাব-অনটন তরুণ যুবক ও বেকারদের অপরাধ সংঘটনে বাধ্য করছে। বাংলাদেশে নানা অব্যবস্থাপনার কারণে অপরাধের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে দ্বিগুণতর হয়ে চলেছে। এক্ষেত্রে প্রবেশন ব্যবস্থায় অপরাধীদের সংশোধনের প্রয়াস চালানো হচ্ছে। আর এ ব্যবস্থার কিছু সুবিধা ও অসুবিধাও বিরাজ করছে। তারপরও এ ব্যবস্থার গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। সুতরাং, প্রবেশন ব্যবস্থার ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রবেশন ব্যবস্থার সুবিধা ও অসুবিধাগুলো ঃ যে বিষয়ের সুবিধা থাকে সে বিষয়ের অসুবিধা ও বিরাজমান হয়। প্রবেশন ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বাংলাদেশের প্রচলিত প্রবেশন ব্যবস্থার কতিপয় সুবিধা ও অসুবিধা আলোকপাতের প্রয়াস চালানো হলোঃ
→ প্রবেশন ব্যবস্থার সুবিধাগুলো ঃ প্রবেশন ব্যবস্থার কিছু সুবিধাবলি নিম্নরূপ :
১. অপরাধ মানসিকতার বিনাশ ঃ প্রচলিত শাস্তি ব্যবস্থায় অপরাধীকে কারাগারে রাখা হয়। আর এতে যে দাগী অসামী ও নোংরা পরিবেশে থেকে আরো অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠে। কিন্তু, প্রবেশন ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ খোলামেলা পরিবেশে ও সমাজে মিশতে পারে বলে এ ধরনের অপরাধ মানসিকতা বিনাশ সাধিত হয়ে থাকে।
২. মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা ঃ প্রবেশনে প্রায়শ অপরাধীদের পূর্ণভাবে সংশোধিত করার জন্য নানান ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা প্রদান করা হয় যা তাদের মাঝে আত্মবোধ ও জ্ঞানের বিস্তার ঘটায়। তাই তারা অপরাধ করতে উৎসাহ পায় না ।
৩. পরিবারের ভরণপোষণ চালনা ঃ অপরাধী তার পরিবারের যাবতীয় ভরণপোষণ চালনার সুযোগ পায়। ফলে তার পরিবারের সদস্যদের জীবনযাপন করা সহজ হয়।
৪. জাতীয় অর্থনীতি চাঙ্গা : প্রত্যেক ব্যক্তির কর্মই জাতীয় অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে। ঠিক তেমনি অপরাধীরাও বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে জীবিকা নির্বাহে। প্রবেশন ব্যবস্থায় এ সুযোগটি অপরাধীদের দেওয়াতে তা জাতীয় অর্থনীতি চাঙ্গা করে থাকে।
৫. চারিত্রিক সংশোধন ৪ অপরাধীর চারিত্রিক সংশোধনই হলো প্রবেশন ব্যবস্থার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুবিধা। প্রবেশনের শর্তগুলো মেনে চললেও প্রবেশন অফিসারের দায়িত্ব সম্পাদনের ভিত্তিতে অপরাধীদের চরিত্রিক সংশোধন সাধন সম্ভবপর হয়। তাই সংশোধনমূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রবেশনের গুরুত্ব অত্যধিক।
৬. রাষ্ট্রীয় ব্যয় হ্রাস ঃ কারাগার ব্যবস্থাপনা, পুলিশ প্রশাসন প্রভৃতি মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি প্রদানে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করতে রাষ্ট্রের প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। প্রবেশন ব্যবস্থায় যা হবে খুবই সীমিত।
৭. দায়িত্ববোধ জাগ্রত ঃ প্রবেশন ব্যবস্থার মাধ্যমেই অপরাধীদের মধ্যে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি প্রকৃত দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা সম্ভব। যখনই শাস্তি না পেয়ে সংশোধনের সুযোগ পাবে সৃষ্টি হবে তাদের মাঝে অনুশোচনা যা দায়িত্ববোধ জাগ্রত করবে।
৮. পুনর্বাসন ঃ প্রবেশন অফিসারের সহায়তায় প্রবেশনাধীন অপরাধীদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়। ফলে অতি সহজেই এসব অপরাধীদেরকে পুনর্বাসনের আওতায় সম্ভব হয়ে থাকে।
প্রবেশন ব্যবস্থার অসুবিধাগুলো ঃ প্রবেশন ব্যবস্থার কিছু অসুবিধা রয়েছে। যেগুলো নিম্নে আলোচিত হলো-
১. অভিযোগকারীর স্বার্থে আঘাত : প্রবেশন ব্যবস্থায় অপরাধীদেরকে এত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় যে অভিযোগকারীর স্বার্থে আঘাতের সৃষ্টি করে। যা বিচারের লক্ষ্যকে কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ করে দেয়।
২. অপরাধী হয়ে থাকার সম্ভাবনা থাকে ঃ যেহেতু প্রবেশন ব্যবস্থায় অপরাধীদের
নিজস্ব পরিবেশ ছেড়ে দেওয়া হয়। তাই প্রতিকূল উপাদানের প্রেক্ষিতে আবারও অপরাধী হয়ে উঠার সম্ভাবনা থেকে যায়। যা সম্ভব বিচারের উদ্দেশ্যকে এ ব্যাহত করে থাকে।
৩. চারিত্রিক পরিবর্তন ব্যাহত হতে পারে ঃ প্রবেশন ব্যবস্থার আলোকে অপরাধীদের চারিত্রিক পরিবর্তনের যে প্রচেষ্টা চালানো হয় তা দক্ষ প্রবেশন অফিসারদের অনুপস্থিতিতে ব্যাহত হতে পারে। তাই বলা যায় না প্রবেশনে গেলেই অপরাধীর চরিত্র ভাল হবে।
৪. হুমকি প্রদান ঃ মামলাতে ছাড়া পেয়ে প্রবেশাধীন অপরাধী প্রতিপক্ষকে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেয় মামলা প্রত্যাহার করানোর জন্য। ফলশ্রুতিতে বাদীর সব আশা-ভরসার কেন্দ্র আদালত তাকে বঞ্চিত করতে পারে।
৫. অপরাধীর ছলনা ঃ প্রবেশনাধীন অপরাধীরা ভালো হয়ে গেছে ও চারিত্রিক দিক দিয়ে উন্নত হয়েছে এমন ধরনের ছল-চাতুরীর আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে। ফলে মামলাতে ছাড়া পাওয়ার পরে এই অপরাধীরা আবার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে । যা দেশ ও জাতির জন্য বড়ই দুঃখের কারণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
৬. আর্থিক ক্ষতিসাধন ঃ প্রবেশন ব্যবস্থার প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত কার্যক্রমটি যদি ফলপ্রসূ না হয় তবে তা আর্থিক ক্ষতি ঘটাবে।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, প্রবেশন ব্যবস্থা হচ্ছে আধুনিককালের অন্যতম একটি সংশোধনমূলক কার্যক্রম। এতে শাস্তির পরিবর্তে সংশোধনের সুযোগ প্রদান করা হয়। আর বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও অন্যান্যসেবা ব্যবস্থার মাধ্যমে অপরাধীদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার প্রয়াস চালানো হয়। বাংলাদেশে অপরাধ ও কিশোর অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলেছে। প্রবেশন ব্যবস্থার অধীনে আনীত অপরাধীদের পূর্ণভাবে সংশোধন করা হয়। আর এতে কিছু সুবিধা ও অসুবিধার সংমিশ্রণ ঘটেছে স্পষ্টভাবে।