উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ বাংলাদেশে হাসপাতাল সমাজসেবা অন্যতম একটি সমাজসেবা কর্মসূচি। যার মাধ্যমে দেশের বহু দরিদ্র অসহায় মানুষ বেঁচে থাকার প্রেরণা পাচ্ছে। অসুখ সারতে পাচ্ছে ওষুধ, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য পুনর্বাসনমূলক সহায়তা। বাংলাদেশের বহু লোকের দিন চলে সামান্য মজুরিতে। তারা সঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়াই করতে পারে না। ঔষুধ কেনা ও সুচিকিৎসা গ্রহণ তো দূরেই থাক এসব লোকদের সার্বিক চিকিৎসা দানের মাধ্যমে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে হাসপাতাল সমাজসেবা পরিচালিত হচ্ছে। যার গুরুত্ব বাংলাদেশিদের জীবনে অত্যাধিক।
→ হাসপাতাল সমাজসেবার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : বাংলাদেশে হাসপাতাল সমাজসেবার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সুদূরপ্রসারী। হাসপাতাল সমাজসেবা বাংলাদেশে দীর্ঘকাল পরিচালিত হয়ে সাধারণ স্তরের মানুষের আর্থ-সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত কল্যাণ আনয়ন করেছে।
হাসপাতাল সমাজসেবার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিম্নরূপ : হাসপাতাল সমাজসেবা আধুনিক সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালিত অন্যতম একটি সমাজসেবা কর্মসূচি। অন্যান্য বিষয়ের মত হাসপাতাল সমাজসেবারও একটি ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে। বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী স্টুল তার ‘Social work” গ্রন্থে হাসপাতাল সমাজসেবার সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করেছেন। ১৮৮০ সালে ইংল্যান্ডে মানসিক রোগীদের পুনঃআক্রমণ রোধের জন্য চিকিৎসা পরবর্তী সেবাদানের গুরুত্বকে স্বীকৃতিদানের মধ্য দিয়ে হাসপাতাল সমাজসেবা অগ্রযাত্রা শুরু। পরবর্তীতে ১৮৯০ সালে Sir chames Lock এর অনুপ্রেরণায় লন্ডনের ইংলিশ হাসপাতালের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা পরিচালিত “The lady Atmoners’
সংগঠন। এই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা স্বউদ্যোগে রোগীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাদি পর্যবেক্ষণ করত এবং বিনামূল্যে ও
রোগীর প্রয়োজনমাফিক চিকিৎসাসেবাদানে সহায়তা করত। ১৮৯৩ সালে নিউইয়র্ক Henry strcef settlemonl House এর Lillaina world and many Bre wester নামক দু’জন মানবসেবিকা প্রতিবেশী দরিদ্র রোগী, যারা চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করতে অক্ষম তাদের গৃহ পরিদর্শন শুরু করেন। তারা ঐসব রোগীদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক কারণকে অসুস্থতার
কারণ হিসেবে গণ্য করেন । Henry Streef settlemenf House এর অভিজ্ঞতার আলোকে নিউইয়র্কের বিভিন্ন হাসপাতাল
বাড়িতে নার্স প্রেরণ শুরু করেন। এবারে মেডিকেলের কিছু ছাত্রছাত্রীদের সামাজিক এজেন্সীতে প্রশিক্ষণদানে প্রেরণ করো হয়। অতঃপর ১৯০২ সালে John Hopkins university এর প্রখ্যাত ডাক্তার charkes P. Emerson চিকিৎসা শিক্ষার অংশ হিসেবে সামাজিক ও আবেগীয় সমস্যাকে অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন এজেন্সীতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে রোগীর আর্থ-সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক প্রভাব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে প্রলুব্ধ করেন। উপরিউক্ত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে হাসপাল সমাজসেবা ১৯০৫ সালে প্রথমবারের মত প্রয়োগ করা হয়। সমাজকর্মীদের একই সময়ে
আমেরিকার নিউইয়র্ক বোস্টন, ম্যাসাচুসেটসও জন হপকিন্স হাসপাতালগুলোতে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগদান করা হয়। বিশ্বের মধ্যে সর্বপ্রথম রোগ চিকিৎসায় হাসপাতাল সমাজকর্মীদের গুরুত্বকে স্বীকৃতিদান করে ম্যাসাচুসেটস হাসপাতালের চিকিৎসক Richard C. cabof। পরবর্তী পর্যায়ে সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের
হাসপাতালে হাসপাতাল সমাজকর্মী নিয়োগ শুরু হয়। আমেরিকায় ১৯১৮ সালে হাসপাতাল সমাজকর্মী সমিতি গঠনের
মাধ্যমে এটি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে ।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের দরিদ্র রোগীদের অকৃত্রিম বন্ধু হাসপাতাল সমাজকর্মীরা তাদের পেশাগত স্বীকৃতি ১৯১৮ সালে গ্রহণ করে। মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে পরিচালিত হাসপাতাল সমাজসেবার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সুদৃঢ় ও বর্ণনাময় ।