বাংলাদেশের শহর সমাজসেবা কর্মসূচির সীমাবদ্ধতাগুলো আলোচনা কর ।

উত্তর : ভূমিকা ঃ বাংলাদেশে শহরায়নের হার দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রতিবছর হাজার হাজার যুবক-যুবতী কর্মের সন্ধানে বড় বড় শহরগুলোতে পাড়ি জমাচ্ছে। শহরের স্বল্প আয়ের জনসাধারণের সার্বিক কল্যাণে শহর সমাজসেবা কর্মসূচি চালু রয়েছে। শহর সমাজসেবা কর্মসূচি শহরবাসীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত উন্নয়নকল্পে পরিচালিত ও প্রমাণিত হয়। বাংলাদেশে এর কর্মসূচির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেগুলো দেশের শহর উন্নয়নে ব্যাপক বাধার সৃষ্টির করছে। তাই সীমাবদ্ধতাগুলো দ্রুত নিরাময় জরুরি।
করা বাংলাদেশে শহর সমাজসেবা কর্মসূচির সীমাবদ্ধতা : বাংলাদেশের শহরগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগাতে শুরু করেছে। গ্রাম্য পরিবেশে লালিত পালিত মানুষগুলো আজ শহরপানে ছুটছে। শহর সমাজসেবা কর্মসূচির
সীমাবদ্ধতাগুলো নিম্নরূপ :
১. অপর্যাপ্ত সমাজসেবা ইউনিট ঃ বাংলাদেশে শহরায়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। ১৯৯৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী সমগ্র বাংলাদেশে ৫০টি শহর সমাজসেবা ইউনিট রয়েছে। যেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। ফলে শহরবাসীদের সার্বিক কল্যাণ সাধন করা আদৌ সম্ভব হচ্ছে না।
২. আর্থিক অপ্রতুলতা ঃ শহরের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় যথেষ্ট অর্থের প্রয়োজন। বাংলাদেশ একটি দারিদ্র্যকবলিত দেশ। বিদ্যমান শহরসমাজ সেবা ইউনিট পরিচালনায় সরকার পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিতে পারে না । তাই শহর সমাজসেবার কাজ মাঝে মাঝে গতিশীলতা হারায়।
৩. সুনির্দিষ্ট নীতি ও পরিকল্পনার অভাব ঃ সুনির্দিষ্ট নীতি ও পরিকল্পনার অভাব যেকোনো কর্মসূচি বিঘ্নিত করতে পারে। বাংলাদেশের শহর সমাজসেবা কর্মসূচি বাস্তবায়নের জোর চেষ্টা চালানো হলেও সুনির্দিষ্ট কোনো নীতি ও
পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় না বলে প্রায় ব্যর্থ হয়।
৪. সমস্ত শহরবাসীকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি : বাংলাদেশে শহর সমাজসেবা কর্মসূচির অন্যতম সীমাবদ্ধতা হলো সমস্ত শহরবাসীকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা যায়নি। এক হিসাবে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের শহরের ১৫ শতাংশ লোক এ প্রদর্শ সূচির আওতায় এসেছে, বাকী ৮৫ শতাংশ শহরবাসী এ কর্মসূচির সুবিধা পাচ্ছে না ফলে শহরের
বেশিরভাগ মানুষকে কর্মসূচির আওতাধীন করা যায়নি।
৫. বস্তিবাসীরা উপেক্ষিত : বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে প্রচুর বস্তি রয়েছে। শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই বস্তিবাসীর সংখ্যা ২০ লাখের ওপরে। শহর সমাজসেবা কর্মসূচির অন্যতম সুবিধা ভোগী বস্তিবাসীরা বরাবরই উপেক্ষিত হয়ে যাচ্ছে। শহরবাসীর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বস্তিবাসীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বাসস্থান সম্পর্কিত পদক্ষেপ খুব কম সময়ই
গৃহীত হয়ে থাকে ।
৬. দক্ষ প্রশিক্ষণের অভাব ঃ সমাজকর্মী গড়ে তোলার জন্য দক্ষ প্রশিক্ষকের একান্ত প্রয়োজন। দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, বাংলাদেশের মত দরিদ্র দেশে দক্ষ প্রশিক্ষকের বেতনভাতা পর্যাপ্ত হারে না দিতে পারায়। ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রশিক্ষক নিয়োগ হওয়ায় শহর সমাজসেবা আরো বেগবান হতে পারছে না।
৭. সমন্বয়হীনতার অভাব ঃ বাংলাদেশে শহর সমাজসেবার অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো সমগ্র কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয় সাধনের অভাব। সমন্বয়হীনতার অভাবে সমগ্র কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন বিঘ্নিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের শহর সমাজসেবা শহরগুলোতে যে কর্মসূচিগুলো পরিচালনা করে তাকে স্বল্প মজুরি ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর আর্থসামাজিকভাবে লাভবান হবার সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার দরুন এই শহর সমাজসেবা কর্মসূচি দ্রুতবেগে এগিয়ে যেতে পারছে না। ফলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রচেষ্টা কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। সুতরাং, শহর সমাজসেবা কর্মসূচির এসব প্রতিবন্ধকতা অবিলম্বে দূর করে শহরের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।