শহর সমাজসেবা কর্মসূচির বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষেপে তুলে ধর।

উত্তর : ভূমিকা ঃ বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র । প্রতিবছর এদেশে নতুন নতুন শহরের আবির্ভাব ঘটছে। শহরে
বাড়ছে জনতার ভিড়। স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা হয়েছে সাধ্যাতীত। নিত্য প্রয়োজনে হিমশিম খাচ্ছে তারা। এ ধরনের মানুষদের অর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে শহর সমাজসেবা কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। ১৯৭৪ সালে থেকে বাংলাদেশে এ কর্মসূচি নিজস্ব বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে। তাই শহরবাসীর কাছে এ কর্মসূচির গুরুত্ব অনেক বেশি।
শহর সমাজসেবা কর্মসূচির বৈশিষ্ট্যগুলো ঃ শহর সমাজসেবা কর্মসূচি স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে সেগুলো আলোচনার প্রচেষ্টা চালানো হলো :
১. প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন সাধন : সারাদেশে ৬৪টি জেলা শহরের ৮০টি ইউনিটের মাধ্যমে শহর সমাজসেবা শহরের পঙ্গু, অন্ধ, বধির, অসহায় ও দুর্বল অক্ষমদের পুনর্বাসন সাধন করে আসছে। আর এ লক্ষ্যে এটি প্রত্যেক
প্রতিবন্ধীকে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি ৫০০০ থেকে ২০০০০ টাকা পর্যন্ত সুদমক্ত ঋণদান করে থাকে।
২. শহরের মহিলোাাদের ক্ষমতায়ন : স্বল্প আয়ের শহরের মহিলোাাদের সেলাই, বুনন ও অন্যান্য কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করা হচ্ছে শহর সমাজসেবা কর্মসূচির বদৌলতে যা মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থা তৈরি করছে।
৩. সুদমুক্ত ঋণদান ঃ সুদমুক্ত ঋণদান করে শহর সমাজসেবা লাখো শহরবাসীর জীবন মানোন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রাখছে। শহর সমাজসেবা ৬৪টি জেলাতে লক্ষ্যভুক্ত পরিবারগুলোকে ৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণদান করে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করছে।
৪. পরিবেশের উন্নয়ন সাধন : শহর সমাজসেবা পরিবেশের উন্নয়ন সাধনে সদস্যদের মাঝে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার
উপকারিতা তুলে ধরে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি বৃক্ষচারা দান করে সামাজিক বনায়নের উৎসাহিত করা।
৫. শহর উন্নয়নকে লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ ঃ শহর সমাজ সেবার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো; এটি শহর উন্নয়নকে লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। দেশের সবগুলো জেলা শহরের সার্বিক কল্যাণ-সাধনের নিমিত্তে এটি পরিচালিত হয়ে থাকে। ফলে শহরগুলোর বাসিন্দাদের জীবন মনোন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে।
৬. পরিকল্পনা ও নীতি গ্রহণের মাধ্যমে প্রক্রিয়া সম্পন্ন ঃ শহর সমাজসেবা কিছু নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও নীতি গ্রহণের মাধ্যমে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে। যদিও বাংলাদেশে এই পরিকল্পনা ও নীতি যথার্থভাবে বাস্তবায়িত হয় না। তারপরও এগুলোর গুরুত্ব শহর সমাজসেবা কর্মসূচিতে অত্যধিক।
৭. বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ঃ বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা শহর সমাজ সেবা কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বলে বিবেচিত প্রত্যেক শহরেই এক কর্মসূচির আওতায় বেকার যুবক-যুবতী, যুদ্ধ, স্বল্প শিক্ষিত শ্রমিক মজুরদের বিভিন্ন বিষয় বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ফলে তারা সামান্য ঋণ গ্রহণ করে ছোট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে গড়ে তোলে আর জীবিকার নিশ্চয়তা সাধনে সক্ষম হয়।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে শহর সমাজসেবা কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্বল্প আয়ের শহরবাসীদের অর্থনৈতিক সমস্যার নিরসনে ও বেকারত্বের হার কমাতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে আসছে। এই শহর সমাজসেবা কর্মসূচির বৈশিষ্ট্যগুলোর মাধ্যমে এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সজাগ হওয়া যায় শহর সমাজসেবার কর্মসূচির গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই বাংলাদেশে শহর সমাজসেবা কর্মসূচি আরো জোরদারকরণ জরুরি।