উত্তর : ভূমিকা ঃ বর্তমান যুগে উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হলো পরিকল্পনা। পরিকল্পনার মাধ্যমেই দেশের সমস্যার সমাধান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হয়। পরিকল্পনা ভবিষ্যতের সুস্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে এবং কাজে সফলতা অর্জনের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করে। এটি উন্নয়নে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি।
→ পরিকল্পনার গুরুত্ব : পরিকল্পনা যত যুগোপযোগী ও গঠনমূলক হবে তত তার সুফল পাওয়া যাবে। পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সমাজ কাঠামো, প্রতিষ্ঠান জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি সর্বক্ষেত্রেই উন্নয়ন সাধিত হয়। এছাড়াও আয় বৈষম্য দরিদ্র ও বেকারত্ব যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। নিম্নে পরিকল্পনার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো :
১. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন ঃ সকল কাজেরই লক্ষ্য থাকে। পরিকল্পনা কাজের লক্ষ্যে পৌঁছিয়ে দেয়। পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করলে একটা দেশ তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে সক্ষম হয়। পরিকল্পনাহীন কাজ নাবিকহীন জাহাজের মতো।
২. কাঙ্ক্ষিত সামাজিক পরিবর্তন ঃ সুশৃঙ্খল পরিকল্পনা দেশে কাঙ্ক্ষিত সামাজিক পরিবর্তন আনয়ন করে। অনুন্নত দেশকে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে উদ্ধার করার একমাত্র উপায় হচ্ছে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। পরিকল্পনা ঠিক করে দেয় কিভাবে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে কাঙ্ক্ষিত সামাজিক পরিবর্তন হবে।
৩. সমন্বয় সাধন ঃ পরিকল্পনা বিভিন্ন কর্মসূচির মাঝে সমন্বয় সাধন করে থাকে। ফলে জনগণের অনুভূত প্রয়োজন পূরণ করা সম্ভব । প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগের কার্যক্রম পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিচালিত হয় ।
৪. সম্পদের সুষম বণ্টন ঃ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা যায়। একদিকে দেশের সম্পদ সীমিত অন্যদিকে যদি সম্পদের সমবণ্টন নিশ্চিত করা না যায় তাহলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব নয়। তাই পরিকল্পনা সম্পদের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা করে থাকে।
৫. পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ ঃ কোনো পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে দেশকে ক্ষতিকরণ অবস্থা থেকে রক্ষা করা যাবে। কোন কর্মসূচি গ্রহণ করলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে তা পরিকল্পনার মাধ্যমে জানা যায়।
৬. জনকল্যাণ সাধন ঃ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলো জনকল্যাণ সাধন করা। অপরিকল্পিত কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ সাধন করা সম্ভব নয়। এছাড়া পরিকল্পিত অর্থনীতি, উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা প্রভৃতির জন্যও পরিকল্পনার প্রয়োজন।
৭. গতিশীল সমাজব্যবস্থা : পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাজ ব্যবস্থাকে গতিশীল রাখা সম্ভব। পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্ত বায়নের ফলে সমাজের গতিধারা স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করে। ফলে সমাজের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকে। সমাজ উন্নয়নের দিকে ধাবিত হয়।
৮. দায়িত্ব ও কর্তব্য বণ্টন ঃ বিভিন্ন বিভাগের মাধ্যমে দায়িত্ব ও কর্তব্য বণ্টন এবং তা পালনের মধ্য দিয়ে সামাজিকও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। তাই সুষ্ঠুভাবে কার্য সম্পাদনের নিমিত্তে দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে বণ্টন ও পালন করতে হবে। আর এজন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনার প্রয়োজন।
৯. মূলধন গঠন : মূলধনের প্রবৃদ্ধি ঘটানো পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সম্ভব। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন মূলধন। মূলধন থাকলেই তা বিনিয়োগ করা যাবে। মূলধন গঠনের সঞ্চয়ের
মনোবৃত্তি থাকতে হবে। এজন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যা পরিকল্পনার মাধ্যমে সহজতর হয়
১০. সমাজকল্যাণের লক্ষ্য অর্জন : সমাজকল্যাণের লক্ষ্য অর্জনে পরিকল্পনা সহায়তা করে। সমাজকল্যাণের লক্ষ্য হলো সমাজের সমস্যাগ্রস্ত মানুষকে এমনভাবে
সহায়তা করা যায় যাতে তারা সক্ষমকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে।
১১. বেকারত্ব দূরীকরণ ঃ বেকারত্ব দূরীকরণে পরিকল্পনার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে । দেশের বেকার জনগোষ্ঠিকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার ব্যাপারটি পরিকল্পনায় সহকারে দেখা হয়।
১২. জরুরি অবস্থা মোকাবেলা ঃ প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় পরিকল্পনায় ব্যাপক কর্মসূচি থাকে। বন্যা, খরা, ‘ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি প্রভৃতি জরুরি অবস্থা মোকাবেলা করা যায় পরিকল্পিত অর্থনীতির মাধ্যমে।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, দেশের সার্বিক উন্নয়নে পরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে দেশের আপামর জনসাধারণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য প্রয়োজন উত্তম পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন।