পরিকল্পনার ধাপসমূহ সংক্ষেপে তুলে ধর।

উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ পরিকল্পনা কোনো কার্যসম্পাদন বা লক্ষ্যার্জনের ভবিষ্যৎন কার্যক্রমের সুচিন্তিত প্রক্রিয়ার নীল নক্সা।
এটি রাষ্ট্রীয় আর্থ-সামাজিক লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত নীতি ও কৌশল প্রয়োগের সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রচেষ্টা কাজেই
পরিকল্পনা কার্যপদ্ধতিতে বিভিন্ন অংশকে ধাপ বা স্তর হিসাবে অভিহিত করেছেন। পরিকল্পনা প্রক্রিয়া হচ্ছে একাধিক ক্রমিক পর্যায় বা স্তরের সমন্বয়ে যার মাধ্যমে একটা সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রণীত হয়।
পরিকল্পনার ধাপসমূহ ঃ যে সমস্ত স্তর বা প্রক্রিয়া অতিক্রমের মধ্য দিয়ে একটি সুষ্ঠু ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্ভবপর হয় সেগুলোকেই সম্মিলিতভাবে পরিকল্পনা প্রণয়নের ধাপ বা প্রক্রিয়া বলা হয় । সঠিক প্রক্রিয়ার উপর মূলত একটি পরিকল্পনার সফলতা বা ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। আর এ সঠিক প্রক্রিয়া নির্ণয় কালে বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন মতামত প্রদান করেছেন। M.L. Seth পরিকল্পনার সনির্দিষ্ট ৪টি স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো :
১. প্রণয়ন (Formelation)
২. গ্রহণ (Adoption).
৩.বাস্তবায়ন ( Execution)
৪. তত্ত্বাবধান (Supervsion)
এম শামসুর রহমান তার আধুনিক লোক প্রশাসন নামক গ্রন্থে পরিকল্পনার তিনটি স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো : ১. উদ্দেশ্য নির্ধারণ; ২. বর্তমান অবস্থা নিরূপণ; ৩. কার্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রূপরেখা অংকন। গেলওয়ে পরিকল্পনার ৫টি স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলোঃ
১. উদ্দেশ্য নির্ধারণ,
২. ঘটনা সংগ্রহ সমস্যাকে বুঝার জন্য গবেষণা করা, বিকল্প সমাধান উদ্ভাবন,
৪. নীতি প্রণয়ন এবং
৫. পছন্দ করা বিকল্প কাজ ।
→ পরিকল্পনার ধাপসমূহ প্রদর্শিত হলো ঃ
১. পরিকল্পনা প্রণয়নে সিদ্ধান্ত : পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার অতীব গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে উন্নয়ন, সমস্যা মোকাবেলা ও আর্থ-সামাজিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার রূপে পরিকল্পনা প্রণয়নে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক হয়ে থাকে। দেশ ও জনগণের প্রতি রাজনৈতিক নেতা ও রাজনৈতিক দলের দায়িত্ববোধ থেকে জনকল্যাণ ও জাতীয় উন্নয়নে সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে।
২. সাংগঠনিক কাঠামো ঃ পরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরপরই এর জন্য যথোপযুক্ত সাংগঠনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন হয়। সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় নীতি নির্ধারণী কর্তৃপক্ষ, কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা সংস্থা বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন, পরিসংখ্যান ও গবেষণা সংস্থা এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যা ও মানের জনশক্তি ও সম্পদ থাকা বাঞ্ছনীয়।
৩. লক্ষ্য নির্ধারণ : পরিকল্পনা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট ও তথ্যবহুল লক্ষ্য নির্ধারণ। লক্ষ্য একাধিক ও কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় হতে পারে। লক্ষ্যসমূহ হতে গুরুত্বানুসারে সাজাতে হয়।
৪. সমস্যা চিহ্নিতকরণ, বিশ্লেষণ ও পটভূমি স্থাপন ঃ লক্ষ্যসমূহ নির্ধারণের পর-বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে এজন্য লক্ষার্জনের পথে সম্ভাব্য সমস্যাসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনুধাবন, সনাক্তকরণ, বিভিন্ন দিকের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ পরিকল্পনা প্রণয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
৫. তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ : পরিকল্পনার লক্ষ্য নির্ধারণ পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য বুনিয়াদি সমীক্ষা। পর্যবেক্ষণ, গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অতীব অভিজ্ঞতা রেকর্ড প্রভৃতি পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের পর সেগুলো ধারাবাহিকভাবে বিশ্লেষণ করতে হয়। তথ্য সংগ্রহ পরিকল্পনার অন্যতম ধাপ।
৬. সম্পদ আহরণ ঃ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সম্পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কাজেই এ স্তরে লক্ষ্যার্জনের সম্ভাব্য.সম্পদসমূহ নিরূপণ ও তাদের উৎস এবং পরিমাণ ও গুণগত হিসাব নির্ণয় করা প্রয়োজন। কখন কিভাবে ও কোন উৎস হতে কতটা সম্পদ পাওয়া যাবে তার যথাযথ বিবরণী প ্রস্তুত করতে হবে।
৭. বিকল্প নীতি ও কার্যপ্রণালি নির্ধারণ ঃ পরিকল্পনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে নীতি ও কার্যপ্রণালী বা পদ্ধতি বিপক্ষীয়দের চাপের কূটনৈতিক মোকাবেলা, অহেতুক কালক্ষেপণ বদ্ধকরণ ইত্যাদির জন্য যথাযথ নীতি ও কার্যবিবরণী নির্ধারণ করতে হয়।
৮. বিকল্প মূল্যায়ন ও পরিকল্পনা বাছাইকরণ ঃ এ স্তরে বিকল্প পরিকল্পনার মধ্য হতে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নে বিকল্প কার্যধারা মূল্যায়ন করা হয়। কাম্য বিকল্প গ্রহণকল্পে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে বিকল্পসমূহ উপস্থাপন করা হয়। এ স্তরে পরিকল্পনাবিদ পরিকল্পনার ব্যয়ের মোট অঙ্ক ও বিভিন্ন সুবিধা অসুবিধা তুলে ধরে।
৯. সময় ও কার্যধারা ঃ পরিকল্পনা বাস্তবরূপে রূপায়নের জন্য সময় তালিকা ও কার্যপ্রবাহ নিরূপণ পরিকল্পনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ । প্রতিটি কাজের প্রারম্ভিক ও সমাপ্তির সময় অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে।
১০. সম্পদ বরাদ্দ ৪ পরিকল্পনার অন্যান্য বিষয়ের সঠিকতার বিবেচনায় সম্পদ নির্ধারণ করা হয়। মূলত সম্পদ.বরাদ্দ বা বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে পরিকল্পনা বাস্তব রূপ লাভ করে। সুষ্ঠু ও কার্যকর বাজেট প্রণয়ন ব্যতীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
১১. বাস্তবায়ন ৪ পরিকল্পনার এ ধাপে রূপরেখা অনুযায়ী পরিকল্পনা প্রয়োগ করা হয়। বাস্তবায়নের উপর সুপ্ত পরিকল্পনার সার্থকতা নির্ভর করে। পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর যথাশীঘ্র সম্ভব তা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। নতুবা অর্থ, সময় ও শক্তির অপচয় হবে।
১২. পরিবীক্ষণ, তত্ত্বাবধান ও মূল্যায়ন ও পরিকল্পনার সর্বশেষ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন। পরিকল্পনা অনুযায়ী যাবতীয় কর্মকাণ্ড সম্পাদিত হচ্ছে কিনা, সেদিকে দৃষ্টিদান ও সম্ভাব্য সমাধানের পথ নির্দেশনা করাই পরিবীক্ষণ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উপরিউক্ত ধাপসমূহ যে-কোনো দেশের যে-কোনো পরিকল্পনায় মোটামুটিভাবে প্রযোজ্য। তবে উন্নত ও অনুন্নত দেশে বাজার অর্থনীতিতে পুঁজিবাদী বা সমাজতান্ত্রিক দেশে সকল ধাপসমূহ অনুসৃত নাও হতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন পরিকল্পনাবিদ গবেষক বা বিশেষজ্ঞগণ পরিকল্পনার

সম্পর্কে পুরোপুরি একমত হতে পারেননি।