অথবা, বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমষ্টি উন্নয়নের কি প্রভাব রয়েছে তা আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমষ্টি উন্নয়নের কি গুরুত্ব রয়েছে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বে সমষ্টি উন্নয়ন একটি পরিচিত বিষয়। বিশ্বের উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সমষ্টি উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় সমষ্টি উন্নয়নকর্মী জনগণের সীমিত সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সমষ্টি জনগণের উন্নয়নের জন্য বাস্তবসম্মত ও যুগোপযোগী কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য জনগণের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা হয়। বাংলাদেশে অনেক সামাজিক সমস্যা বিদ্যমান। এ সমস্যাগুলো সমাধানের আর্থিক, কারিগরি ও অন্যান্য জ্ঞান এদেশের জনগণের নেই। ফলে বাংলার গ্রামীণ জনগণ দিন দিন সমস্যাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। তাই বাংলাদেশের জনগণের বিশেষ করে গ্রামীণ জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমষ্টি উন্নয়নের ভূমিকা : বাংলাদেশ
উন্নয়নশীল দেশ। এদেশের অধিকাংশ মানুষই দরিদ্র। বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা অনেক বেশি। কিন্তু সম্পদ খুবই কম। বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমষ্টি উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নিম্নে বাংলাদেশের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমষ্টি উন্নয়ন কার্যক্রমের ভূমিকা আলোচনা করা হল :
১. সামাজিক সমস্যা সমাধান : বাংলাদেশে সামাজিক সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। এদেশে সামাজিক সমস্যার আধিক্যের কারণে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, জনসংখ্যা, অপরাধ ও কিশোর অপরাধ, দুর্নীতি, অপুষ্টি ইত্যাদি সামাজিক সমস্যা রয়েছে। এসব সামাজিক সমস্যা বাংলাদেশের জনগণকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে পঙ্গু করে দিচ্ছে। ফলে জনগণ তাদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারছে না। সমষ্টি উন্নয়নের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের উন্নয়ন করতে পারে।
২. প্রাকৃতিক দুর্যোগ দূরীকরণ : বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। এদেশে প্রতি বছর বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, টর্নেডো ইত্যাদি হয়ে থাকে। এসব ঝড়ের কারণে মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফসল নষ্ট হয়, বাড়িঘর নষ্ট হয়, গবাদি পশু নষ্ট হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ গ্রামীণ মানুষের দরিদ্রতার
অন্যতম কারণ। কিন্তু গ্রামের মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারে না। সমষ্টি উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলা যায়। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা বেঁচে যাবে, তা দিয়ে জনগণের উন্নয়ন সাধন করা যাবে।
৩. গ্রামীণ জনগণকে সংগঠিতকরণ : বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষই অসংগঠিত। ফলে বড় বড় সমস্যা তারা মোকাবিলা করতে পারে না। এটা গ্রামীণ জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হওয়ার অন্যতম কারণ। সমষ্টি উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণকে সংগঠিত করে তাদেরকে সমস্যা সমাধানে পারদর্শী করে তোলা হয়। ফলে তারা
তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নও সাধন করতে সক্ষম হয়।
৪. গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষার প্রসার : শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি করতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশে নিরক্ষরতার হার এখনও ৬৫%। গ্রাম এলাকায় নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতার হার আরও বেশি। ফলে নিরক্ষরতার কারণেই বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকার জনগণ তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন করতে পারছেন। সমষ্টি উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণকে শি
ক্ষিত করে তোলা যায়। গ্রামীণ জনগণকে শিক্ষিত করতে পারলে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
৫. গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ : বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন করতে হলে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ সাধন করতে হবে। বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে মৎস্য চাষ, পশু পালন, কুটিরশিল্প, শাকসবজির চাষ, হাঁস-মুরগির চাষ ইত্যাদির অবদান রয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় এসব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরও বিকশিত করতে হবে। তাহলে গ্রামীণ জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন হবে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে একথা বলা যায় যে, সমষ্টি উন্নয়ন সারাবিশ্বে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত এলাকার জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশের সম্পদ অত্যন্ত সীমিত। কিন্তু সমস্যা প্রচুর। বিশেষ করে গ্রামীণ জনগণের অবস্থা শোচনীয়। তাই সমষ্টি উন্নয়ন কার্যক্রম বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা পালনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধন করতে পারে। সেজন্য সরকারকেও প্রয়োজনীয় সাহায্য ও সহযোগিতা করতে হবে।