অথবা, প্ৰবেশন ব্যবস্থার ইতিবাচক বা ভালো দিকগুলো আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : অপরাধ প্রবণতা এক ধরনের মানবীয় আচরণ এবং অপরাধী ব্যক্তির চারিত্রিক বা ব্যবহারিক উন্নতি না ঘটলে তার মনের অপরাধ প্রবণতা কোন প্রকার শাস্তি প্রদান দ্বারা দূর করা সম্ভব নয়। আর এ কারণেই চারিত্রিক সংশোধনের ক্ষেত্রে “পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা কর” এ নীতি গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে অপরাধ কর্মের চেয়ে অপরাধী যে কারণে অপরাধে লিপ্ত হয়, সে কারণের উপরই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। আধুনিক বিশ্বে অপরাধীর সংশোধনমূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে । প্রবেশন তাদের মাঝে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ্ধতি।
প্রবেশন ব্যবস্থার সুবিধা : বর্তমান বহুমাত্রিক অপরাধ জগতে অপরাধীকে শাস্তির পরিবর্তে চারিত্রিক সংশোধনের মাধ্যমে সমাজে পুনর্বাসিতকরণে প্রবেশন ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। আর তাই যুক্তিসংগত কারণেই প্রবেশন ব্যবস্থার কতকগুলো সুনির্দিষ্ট সুবিধা রয়েছে। নিম্নে প্রবেশন ব্যবস্থার এ সুবিধাসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. অপরাধীর চরিত্র সংশোধন : মানুষের অপরাধমূলক আচরণ প্রধানত এক ধরনের চারিত্রিক অসংগতির অনিবার্য পরিণতি। সুতরাং অপরাধীর শাস্তির চেয়ে অপরাধীর চারিত্রিক সংশোধন অধিকতর যুক্তিসংগত। আর এ কারণেই প্রবেশন ব্যবস্থায় অপরাধীর চরিত্র সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
২. প্রবেশন শাস্তি এবং সংশোধনের মাঝে একটি সুষ্ঠু সমন্বয় ব্যবস্থা : প্রবেশন ব্যবস্থা শাস্তি এবং সংশোধন উভয়ের মাঝে এক অনন্য সমন্বয় সাধন করে থাকে। কারণ প্রবেশন ব্যবস্থায় অপরাধীর জন্য প্রদেয় শাস্তি অন্যান্যদের নিকট নিবারণমূলক ভূমিকা পালন করে। অপরাধী নিজে শাস্তির ভয়ে ভীত হয়, ফলে তার সংশোধনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সুতরাং প্রবেশন ব্যবস্থা সমাজের জন্য মঙ্গলজনক।
৩. অপরাধীকে সমাজে পুনরায় সামঞ্জস্য বিধানে সহায়তা করে : প্রবেশন ব্যবস্থায় অপরাধী অপরাধ জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সামাজিক পরিমণ্ডলে স্বাভাবিক জীবনযাপনে তথা পুনরায় সমাজের সাথে উপযুক্ত অভিযোজনের মাধ্যমে সামঞ্জস্য বিধান করে চলতে সক্ষম হয়ে উঠে।
৪. পরিবারের সদস্যদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধান : প্রবেশন ব্যবস্থায় অপরাধী তার স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারে বলে সে তার পরিবারের ভরণপোষণ চালাতে পারে। আর তার শাস্তিটি যদি আর্থিক ক্ষতিপূরণের হয়, তাহলে সে তা পরিশোধ করতে পারে বলে অপরাধী নিজে এবং তার পরিবার আর্থিক নিরাপত্তা লাভ করতে পারে।
৫. প্রবেশন ব্যবস্থা স্বল্প ব্যয়সাপেক্ষ : প্রবেশন ব্যবস্থা কারাগারের চেয়ে স্বল্প ব্যয়সাপেক্ষ। কারণ এক্ষেত্রে অপরাধী তার নিজের প্রয়োজনীয় চাহিদা নিজেই পূরণ করতে সক্ষম হয়। তাছাড়া অপরাধী যেহেতু বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে তার স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারে, সেহেতু তার পরিবারও আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয় না।
৬. প্রবেশন ব্যবস্থা অপরাধীকে আত্মনির্ভরশীল এবং দায়িত্বশীল করে তোলে : প্রবেশন ব্যবস্থায় অপরাধী আত্মনির্ভর, আত্মনিয়ন্ত্রণ করার তথা আত্মবিশ্বাসী হওয়ার গুণাবলি অর্জন করে। অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ার পরও প্রবেশনাধীন জীবনে তাকে তার হারানো মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে হয় বলে অপরাধীকে অধিক দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হয়।
৭. অপরাধীকে মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা প্রদান : প্রবেশন ব্যবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশেষ মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়, যা সাধারণ কারাগারে প্রায় ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না।
৮. জাতীয় অর্থনৈতিক গতি অব্যাহত রাখে : প্রবেশনাধীন অপরাধী যেহেতু তার পেশাগত কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ লাভ করে, সেহেতু জাতীয় অর্থনীতিতে তার অবদান থাকতে পারে এবং সে যথা
বিহিত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে যথাযথ সামাজিক ভূমিকা পালন করতে পারে।
৯. অপরাধীর চরিত্র বিশ্লেষণ : প্রবেশন ব্যবস্থায় প্রবেশন কর্মকর্তা যেহেতু অপরাধীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসে, সেহেতু তিনি অপরাধীর চরিত্র বিশ্লেষণ করতে, অপরাধের কারণ উদ্ঘাটন করতে এবং সর্বোপরি অপরাধ দূরীভূত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপেক্ষিতে বলা যায় যে, আধুনিক বহুমাত্রিক অপরাধের যুগে প্রবেশন. ব্যবস্থার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ প্রবেশন ব্যবস্থায় শাস্তি মওকুফ করা হয় না, বরং শাস্তি স্থগিত রেখে তাকে সংশোধনের মাধ্যমে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়। অতএব পরিশেষে বলা যায় যে, প্রবেশন ব্যবস্থা অপরাধিকে গুরুতর দন্ড মওকুফ থেকে রক্ষা করে থাকে। এটা অপরাধীর জন্য সুফল বয়ে আনে।