অথবা, বিচ্যুত আচরণ সামাজিক জীবনে কিভাবে প্রভাবে রাখে? বর্ণনা কর।
অথবা, বিচ্যুত আচরণের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানবসমাজের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হওয়া। সমাজের পরিবর্তনের এ ধারায় সমাজের সব উপাদানই সময়ের প্রবহমানতায় লাভ করে নতুন রূপ। সামাজিক অনুশাসনও এর ব্যতিক্রম নয়। সমাজের কোন আদর্শ, মূল্যবোধ, প্রথা, রীতি, আইনই সর্বজনীন বা সর্বকালীন নয়। সমাজের সব সদস্যকে একটি নির্দিষ্ট পথে পরিচালিত করতে মানুষ যেমন আইনের উৎকর্ষ সাধন করে, সব সমাজেই তেমনি সে আইন অমান্য করতেও কিছুসংখ্যক ব্যক্তি বিভিন্ন পন্থার উদ্ভাবন করে। সমাজের প্রচলিত রীতিবিরুদ্ধ এসব মানব আচরণকেই বলা হয় বিচ্যুতি বা Deviance। বর্তমানে বিচ্যুত আচরণ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সমাজের সর্বক্ষেত্রে প্রচলিত প্রথাবিরোধী আচরণ সংগঠিত হচ্ছে। ফলে অপরাধবিজ্ঞানী বিচ্যুতি ব্যবহারের প্রকৃতি ও তার বিভিন্ন ধরনকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করার জন্য বিভিন্ন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিচ্যুত আচরণের প্রভাব : বিচ্যুত আচরণ সমাজজীবনে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। অবশ্য কোন কোন ক্ষেত্রে বিচ্যুত আচরণ সামাজিক প্রগতিশীলতাকে ত্বরান্বিত করে। আর তাই বিচ্যুত আচরণ দুভাবেই সমাজ জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিচ্যুত আচরণের প্রভাব প্রতিক্রিয়াকে দুভাগে ভাগ করা যায় : বিচ্যুত আচরণের প্রভাব প্রতিকূল প্রভাব অনুকূল প্রভাব
১. বিচ্যুত আচরণের প্রতিকূল প্রভাব : বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিচ্যুত আচরণ সমাজজীবনে বিরূপ বা প্রতিকূল প্রভাব সৃষ্টি করে । নিম্নে বিচ্যুতির প্রতিকূল প্রভাবগুলো উল্লেখ করা হলো : বিচ্যুতি ব্যবহারের ফলে সামাজিক সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ে।বিচ্যুতি ব্যবহারের কারণে সমাজের বিধিনিষেধ কার্যকর করতে বাধার সৃষ্টি হয়। বিচ্যুতি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি করে। বিচ্যুতি সমাজের অর্থনীতির বিভিন্ন উদ্যোগকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পারস্পরিক সম্পর্ক বিনষ্ট করে বিচ্যুতমূলক আচরণ। বিচ্যুতি সামাজিক ভূমিকাকে বিঘ্নিত করে। প্রভাবশালীদের দ্বারা সংগঠিত বিচ্যুতি নিরীহ ব্যক্তিদেরকে বঞ্চিত করে। বিচ্যুতি ঝগড়া থেকে হত্যাকাণ্ড সংগঠনে প্রভাবিত করে।
২. বিচ্যুত আচরণের অনুকূল প্রভাব : শুধু সমাজজীবনে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে না। অনেক সময় বিচ্যুতি সমাজে অনুকূল প্রভাবও সৃষ্টি করে থাকে। সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে সামাজিক অনুশাসনগুলোরও ঘটে ব্যাপক পরিবর্তন। সময়ের প্রেক্ষাপটে সবসময় প্রচলিত রীতিনীতি একই রকম হয় না। প্রয়োজনের নিমিত্তে নতুন নতুন রীতি প্রথার পরিচয় ঘটানো হয়। এভাবে যেসব নতুন রীতির পরিচয় ঘটানো হয় তা বিচ্যুত আচরণ নয়। ফলে ঐ ধরনের আচরণ পরবর্তীতে সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করে। এক্ষেত্রে নারীদের কর্মে যোগদান অপরাধ না হলেও তাকে বিচ্যুতি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বর্তমানে এ ধরনের আচরণ বিচ্যুতি নয় এবং নারী স্বাধীনতা একটি বিশ্বজনীন স্বীকৃত বিষয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, মানবসভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে মানবসমাজ ক্রমাগতভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। এ পরিবর্তন শুধু সামাজিক পরিবর্তন নয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সর্বোপরি সাংস্কৃতিক পরিবর্তনও এর বাইরে নয়। বর্তমানে বিচ্যুতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বিচ্যুতির প্রকৃতি, কারণ ও প্রভাব সম্পর্কে সমাজতাত্ত্বিক ও অপরাধবিজ্ঞানীরা উৎসাহিত হয়েছে। বিচ্যুতির প্রকৃতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর প্রকৃত কারণ ও উৎস উদ্ঘাটন করতে হবে।