অথবা, সামাজিক অসমতার ক্ষেত্রে ক্রিয়াবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দাও।
অথবা, সামাজিক অসমতার ক্ষেত্রে ক্রিয়াবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বিশ্লেষণ ধর্মী আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ক্রিয়াবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সমাজ ও সংস্কৃতির ব্যাখ্যায় সর্বদাই সামাজিক উপাদানের ভূমিকা, কার্যাবলি ও তার প্রভাব বা ফলাফল পর্যালোচনা করে। কেবল তাই নয়, ক্রিযাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এটাও দেখে যে, কিভাবে সমাজের উপাদানগুলো স্ব-স্ব ভূমিকা পালন করতে গিয়ে একের সাথে অন্যটির একটা ক্রিয়াবাদী সম্পর্ক বজায় রেখে, গোটা সমাজের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে এবং সমাজের অস্তিত্ব বজায় রাখে।
সামাজিক অসমতার ক্ষেত্রে ক্রিয়াবাদী দৃষ্টিভঙ্গি : ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুরখেইম (Emile Durkheim) ক্রিয়াবাদী দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থক ছিলেন। ক্রিয়াবাদী দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে তিনি ১৮৯৩ সালে সামাজিক অসমতার একটি ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তিনি তাঁর Division of Labour in Society (1964) গ্রন্থের উপসংহার টেনে বলেছেন, সকল সমাজই কিছু কাজকে অন্যান্য কাজ অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করে। কোন সমাজ ধর্মীয় যুক্তিকে আবার কোন সমাজ যুদ্ধকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বা মূল্য দিতে পারে। অপরদিকে, কাজের যেমন ক্রমোচ্চমান নির্ণয় করা যায়, তেমনি এটাও বলা চলে যে, সবার মেধা বা প্রতিভা একরকম নয়। অর্থাৎ, মেধারও ক্রমোচ্চমান রয়েছে। বস্তুত এ কারণে মানবসমাজে অসমতা লক্ষ্য করা যায়। আবার ডুরখেইমের চিন্তাধারার সাথে সঙ্গতি রেখে কিংসলে ডেভিস ও উইলবার্ট ম্যুর (Kingsley Davis and Wilbert Moore) ক্রিয়াবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে সামাজিক অসমতা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৫- সালে ‘Some Principles of Startification’ শীর্ষক নিবন্ধে তাঁর তত্ত্ব প্রদান করেন। ডেভিস এবং ম্যুর বলেছেন, “সমাজের জন্য সামাজিক অসমতা তথা সামাজিক স্তরবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।” মানবসমাজে এমন কিছু কাজ – রয়েছে, যার জন্য দক্ষ ও মেধাবী লোক প্রয়োজন আর এ দক্ষ ও মেধাবী লোকের যোগান খুব সীমিত। বস্তুত সমাজে যারা গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করার যোগ্যতা রাখে, তাদেরকে বিশেষ সম্পদ, ক্ষমতা ও খ্যাতি প্রদানের মাধ্যমে ঐসব কাজের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচানার আলোকে বলা যায় যে, ক্রিয়াবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সামাজিক অসমতার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটি ক্রিয়া বা কাজের দ্বারা অসমতা নির্ণয়কে বুঝিয়ে থাকে ।