ভারতীয় সমাজে সামাজিক অসমতায় জাতি বর্ণ প্রথা কতটুকু দায়ী? ব্যাখ্যা কর?

অথবা, ভারতীয় সমাজে সামাজিক অসমতায় জাতিবর্ণ প্রথা কতটুকু দায়ী?
এ প্রসঙ্গে তোমার মতামত দাও।
অথবা, ভারতীয় সমাজে সামাজিক অসমতায় জাতিবর্ণ প্রথা কতটুকু দায়ী?
যুক্তিসঙ্গত বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
ধর্মীয় পবিত্রতা ও অপবিত্রতা নির্ভর করে গড়ে উঠা সামাজিক স্তরবিন্যাসই হলো জাতিবর্ণ প্রথা বা Caste system । সমাজবিজ্ঞানী T. B. Bottomore ভারতীয় সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে জাতিবর্ণ প্রথার কথা বলেছেন।
ভারতীয় সমাজে সামাজিক অসমতায় জাতিবর্ণ প্রথা : ভারতীয় সামাজিক স্তরবিন্যাস বা সামাজিক অসমতা ব্যাখ্যায় জাতিবর্ণ প্রথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সমাজের প্রত্যেক জাতিবর্ণের নিজস্ব বিবাহ ব্যবস্থা ও পৈতৃক পেশা নির্ধারিত হয়েছে। বিভিন্ন জাতিবর্ণ, উঁচুনিচু অবস্থানে অনেকটা স্থায়ীভাবে স্তরায়িত। এখানে জাতিবর্ণকে অনড় ও অপরিবর্তনীয় শ্রেণি বলা হয়। ভারতে হিন্দু সমাজের শাস্ত্র অনুযায়ী চারটি প্রধান জাতিবর্ণ দেখা যায়। যথা :
১. ব্রাহ্মণ বা ধর্মীয় পুরোহিত শ্রেণি,
২.ক্ষত্রিয় বা যোদ্ধা শ্রেণি,
৩.বৈশ্য বা ব্যবসায়ী শ্রেণি ও
৪. শূদ্র বা চাকর শ্রেণি।
ভারতের হিন্দুধর্মের অনুসারীরা বা জাতিবর্ণের অন্তর্গত ব্যক্তিদের বিশ্বাস এ চারটি প্রধান জাত-বর্ণ (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র) দেবতা ব্রহ্মার (সৃষ্টিকর্তার) শরীরের চারটি অঙ্গ থেকে উৎপত্তি। যেমন- ব্রাহ্মণেরা দেবতার মুখ থেকে, ক্ষত্রিয়রা বাহু থেকে, বৈশ্যরা উরু থেকে এবং শূদ্ররা পায়ের তলা থেকে উদ্ভূত। দেহের অঙ্গের সাথে সাদৃশ্য বিচারে শূদ্র
থেকে ব্রাহ্মণদের ক্রমোচ্চ সামাজিক মর্যাদা স্বীকৃত । ব্রাহ্মণরা হচ্ছে ধর্মযাজক বা পুরোহিত। এরা পণ্ডিত। এরা বেদ বাণী শোনাবে এবং অন্যান্য জাত-বর্ণের পক্ষে ধর্মীয় কাজ সম্পাদন করবে বা নেতৃত্ব দিবে। বস্তুত এরা সমাজের উঁচু শ্রেণিবর্গ। ক্ষত্রিয়রা শাসক এবং যোদ্ধা, এরা রাজশক্তির অধিকারী। তারা শত্রুর মোকাবিলা করবে, ব্রাহ্মণদের দান-দক্ষিণা দিবে, বৈশ্যদের রক্ষা করবে এবং বিনিময়ে তারা শিষ্যদের থেকে সম্পদ বা খাজনা লাভ করবে। তাছাড়া তারা ব্রাহ্মণদের উৎসর্গের একটি অংশও পাবে। বৈশ্যরা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত। এরা কৃষক ও ব্যবসায়ী। তারা ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের জন্য কৃষি উৎপাদন, পশুপালন এবং ব্যবসায় বাণিজ্য করবে। পরিশেষে, সমাজের সর্বনিম্ন পর্যায়ে শূদ্রদের স্থান, তারা মূলত সেবক। এরা উপর্যুক্ত বর্ণের মানুষদের সেবায় সর্বদা নিয়োজিত থাকবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ভারতীয় সমাজের মত অন্য কোন সমাজে জাতিবর্ণ প্রথা তীব্র আকার ধারণ করে নি। এ সমাজে সামাজিক অসমতা সৃষ্টির পিছনে জাতিবর্ণ প্রথা যে অন্যতম দায়ী তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b7%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%a0-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4/