অথবা, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার সংজ্ঞা দাও।
অথবা, পুঁজিবাদ কী?
অথবা, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা কাকে বলে?
উত্তর৷ ভূমিকা : মানবসভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, মানবসমাজ প্রধানত চারটি পর্যায় অতিক্রম করে বর্তমান পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে। এ পর্যায়গুলো হচ্ছে যথাক্রমে সামন্তবাদী সমাজব্যবস্থা, দাস সমাজব্যবস্থা, সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এবং ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত সংগঠিত বিপ্লবগুলোর মাধ্যমে বুর্জোয়াগণ সামন্তবাদী ব্যবস্থার পরিবর্তে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা বা সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।
পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা : ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা হলো এমন একটি অর্থব্যবস্থা, যেখানে সম্পদের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকে এবং উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ প্রভৃতি যাবতীয় অর্থনৈতিক কার্যাবলি ব্যক্তিগত উদ্যোগের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা, উদ্যোগের স্বাধীনতা, ভোগকারীর সার্বভৌমত্ব ও স্বয়ংক্রিয় মূল্যব্যবস্থা এগুলো হলো ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মূলকথা হলো ব্যক্তিগত উদ্যোগের স্বাধীনতা। এ অর্থব্যবস্থাকে অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগের অর্থনীতি বা স্বাধীন উদ্যোগের অর্থনীতি বলে থাকেন।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন মনীষী বিভিন্নভাবে এর সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো : ওয়েবসের মতে, “পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্র হলো এমন এক সমাজব্যবস্থা, যেখানে শিল্প ও অন্যান্য আইনগত প্রতিষ্ঠানসমূহ এমন একটি স্তরে উপনীত হয় যেখানে অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ উৎপাদনের উপকরণগুলোর মালিকানা থেকে বঞ্চিত হয়ে দিনমজুরে পরিণত হয়।”
অধ্যাপক ডি.এম. রাইটের মতে, “পুঁজিবাদ এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে ব্যক্তির কাজ বিশেষ করে নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত বেসরকারি উদ্যোগে গৃহীত হয় এবং তা অবাধ প্রতিযোগিতা ও মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়।”
উপসংহার : উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে, পুঁজিবাদ হচ্ছে এমন এক সমাজব্যবস্থা, যেখানে উৎপাদন, বণ্টন, চাহিদা, মূল্যনির্ধারণ ইত্যাদিতে রাষ্ট্রের কোন ভূমিকা থাকে না।
