অথবা, সাংস্কৃতিক ব্যবধান কী?
অথবা, সাংস্কৃতিক ব্যবধান কাকে বলে?
অথবা, সাংস্কৃতিক ব্যবধান বলতে কী বুঝ?
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজে সংস্কৃতির প্রধান দুটি দিক তথা বস্তুগত সংস্কৃতি ও অবস্তুগত সংস্কৃতির মধ্যে যদি পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে তবে সমাজের স্বাভাবিক গতি ও ভারসাম্য ত্বরান্বিত হয়। সমাজের এ অংশগুলো যদি যথারীতি ও আনুপাতিক গতিতে পরিবর্তিত না হয় তাহলে ভারসাম্য রক্ষিত হয় না। ফলে সৃষ্টি হয় সাংস্কৃতিক ব্যবধান। অর্থাৎ সংস্কৃতির দুটি উপাদানের মধ্যে যদি বস্তুগত সংস্কৃতি দ্রুতগতিতে এবং অবস্তুগত সংস্কৃতি ধীরগতিতে পরিবর্তিত হয় তাহলে এ দুটি উপাদানের মধ্যে যে Gap সৃষ্টি হয় তাই Cultural lag বা সাংস্কৃতিক ব্যবধান।
সাংস্কৃতিক ব্যবধান (Cultural lag) : ১৯২২ সালে প্রকাশিত ‘Social Change’ গ্রন্থে Sociologist W. F. Ogburn ‘Cultural lag’ একটি Theory প্রদান করে। W. F. Ogburn বলেছেন যে, “Material culture যত দ্রুতগতিতে Change হয় Non material culture তত দ্রুতগতিতে Change হয় না। ফলে উভয়ের মধ্যে একটি Lag সৃষ্টি হয়। একেই বলে Cultural lag. এ সম্পর্কে Ogburn এর মূল বক্তব্য হচ্ছে-
১.সমাজ বা সংস্কৃতির বিভিন্ন অংশ পরস্পরের সাথে কার্যকরণ সূত্রে আবদ্ধ ।
২.সংস্কৃতির বিভিন্ন অংশ অসম গতিতে এগিয়ে চলে।
৩.বস্তুগত সংস্কৃতি অবস্তুগত সংস্কৃতি অপেক্ষা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে।
৪.অসমগতির কারণে দু’সংস্কৃতির মাঝে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়।
৫.ফলে দু’সংস্কৃতি পরস্পরের সাথে তাল মেলাতে না পারায় সাংস্কৃতিক ব্যবধান সৃষ্টি হয়। উপরের Diagram টিতে Ogburn দেখাতে চেয়েছেন যে, একটি কাল্পনিক ব্যবসায় ক্ষেত্রে Typewriter এর উপস্থিতির সাথে Technology এর বিস্তারের ফলে কাঙ্ক্ষিত Typewriter এর উপস্থিতির মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি হয়, তাকে তিনি Cultural lag বলে অভিহিত করেছেন। পরবর্তীকালে ১৯৫৩ সালে Ogburn ও Nimkoff তাঁদের ‘A Handbook of Sociology’ গ্রন্থে Cultural lag এর একটি সংজ্ঞা প্রদান করেন, “The strain that co-exists between two co-related parts of culture that change at unequal rates of speed.” Technology এর Development এর সাথে আমাদের বৈষয়িক জীবনের দ্রুতগতিতে পরিবর্তন আসলেও মনোজগতে বা মূল্যবোধে সেসব পরিবর্তন আসে না। এর ফলে সাংস্কৃতিক ব্যবধান সৃষ্টি হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, সংস্কৃতি হলো মানুষের তৈরি বস্তু ও একটি উপায় যার মাধ্যমে সে তার উদ্দেশ্য সাধন করে। সমাজবিজ্ঞানী অগর্বান সর্বপ্রথম সংস্কৃতিক ব্যাবধান নামক প্রত্যয়টি ব্যাখ্যা করেন। তিনি মূলত বুঝাতে চেয়েছেন যে, বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতি পরস্পরের সাথে তাল মেলাতে না পারায় সাংস্কৃতিক ব্যবধান সৃষ্টি হয়।