অথবা, মৌলিক ও মাঠ গবেষণার মধ্যে পার্থক্য লিখ।
অথবা, মৌলিক ও ফলিত গবেষণার মধ্যে বৈসাদৃশ্য তুলে ধর।
অথবা, মৌলিক ও মাঠ গবেষণার মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা কর।
অথবা, মৌলিক ও মাঠ গবেষণার মধ্যে বৈসাদৃশ্য বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : মৌলিক গবেষণা ফলিত গবেষণার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। আর ফলিত গবেষণা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিভিন্ন তত্ত্বের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশলকে অধিকতর উন্নত করা যায় । ফলে এ দু’ধরনের গবেষণার মধ্যে ব্যাপক কোনো পার্থক্য নেই।
মৌলিক ও ফলিত গবেষণার মধ্যে পার্থক্য : নিম্নে মৌলিক ও ফলিত গবেষণার পার্থক্য তুলে ধরা হলো :
১. সংজ্ঞাগত : মৌলিক গবেষণা বলতে তত্ত্ব ও অনুসিদ্ধান্তের অভীক্ষা ও পরিমার্জন বুঝানো হয়ে থাকে, যা জ্ঞানের তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকে উৎকর্ষ সাধন এবং বিশুদ্ধকরণ ঘটায়। অন্যদিকে, কোনো সামাজিক সমস্যার সমাধানে প্রায়োগিক হতে পারে এমন ফলাফল সমৃদ্ধ যে গবেষণা তা হলো ফলিত গবেষণা।
২. লক্ষ্যগত : মৌলিক গবেষণার মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বের বিভিন্ন মৌলিক নীতি ও সত্য আবিষ্কার করা। অপরদিকে, পলিত গবেষণার মুখ্য উদ্দেশ্য হলো তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারযোগ্য ও লাগসই সিদ্ধান্ত উদ্ভাবন করা।
৩. তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে : মৌলিক গবেষণা পরিসংখ্যানগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক বা প্রভাব আবিষ্কার করতে চায়। অন্যদিকে, ফলিত গবেষণা ব্যবহারিক তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক ও প্রভাব আবিষ্কার করতে চায় ।
৪. প্রশ্নের সমাধানের ক্ষেত্রে : মৌলিক গবেষণা যে কোনো একক প্রশ্নের উত্তর বের করতে সচেষ্ট থাকে। অন্যদিকে, ফলিত গবেষণা বহুবিধ প্রশ্নের উত্তর বের করতে সচেষ্ট থাকে।
৫. ইচ্ছার ক্ষেত্রে : মৌলিক গবেষণা যে কোনো একক প্রশ্নের উত্তর বের করতে সচেষ্ট থাকে। অন্যদিকে, ফলিত গবেষণা যে কোন সমস্যাকে বুঝতে ও মোকাবিলা করতে চায়।
৬. প্রশ্নের সমাধানের ক্ষেত্রে : মৌলিক গবেষণা যে কোন একক প্রশ্নের উত্তর বের করতে সচেষ্ট থাকে। অন্যদিকে, ফলিত গবেষণা বহুবিধ প্রশ্নের উত্তর বের করতে সচেষ্ট থাকে ।
৭. পরিসরের ক্ষেত্রে : মৌলিক গবেষণা বিদ্যায়তনিক পরিসরভিত্তিক। অন্যদিকে, ফলিত গবেষণা সরকার, সংস্থা ব্যবসায় ও শিল্পের পরিসরভিত্তিক।
৮. প্রকৃতির ক্ষেত্রে : মৌলিক গবেষণার প্রকৃতি হলো স্বসূচি। অন্যদিকে, ফলিত গবেষণা হলো লক্ষ্য দল বা সুবিধা প্রাপক কর্তৃক সূচিত ।
৯. আর্থিক সাহায্যের ক্ষেত্রে : মৌলিক গবেষণা মঞ্জুরি হিসেবে আর্থিক সাহায্যপ্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে, ফলিত গবেষণা চুক্তির ভিত্তিতে আর্থিক সাহায্য প্রাপ্ত হয়।
১০. সময়ের ক্ষেত্রে : মৌলিক গবেষণায় সময়ের প্রশ্নের কম চাপ পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু ফলিত গবেষণায় সময়ের প্রশ্নের ক্ষেত্রে অধিক চাপ পলিক্ষিত হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত পার্থক্যের আলোকে আমরা বলতে পারি যে, মানব জ্ঞান বিকাশের ধারাবাহিকতায় জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধশালী করার মাধ্যমেই মৌল গবেষণার উদ্ভব হয়েছে। পক্ষান্তরে, সমাজবিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে সামাজিক মানুষের প্রয়োজনের বাস্তবতা থেকেই প্রায়োগিক গবেষণা বা ফলিত গবেষণার বিস্তৃতি ঘটেছে। সামাজিক সমস্যা নিরূপণে বাস্তব প্রয়োজনের উদ্দীপনে সমাজ গবেষণা বিস্তৃত ও এর প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যাচ্ছে। সেজন্য ফলিত গবেষণার প্রসারতা
সমাজের সমস্যা শনাক্তকরণ ও অনুসন্ধানে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। বস্তুত মৌলিক গবেষণা ও ফলিত গবেষণার মধ্যে যে পার্থক্যটুকু বিদ্যমান তা মূলত মাত্রাগত এবং উভয়েই জ্ঞানের পরিবর্ধন ও সংস্করণে সাহায্য করে।