অথবা, ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুসারে সংসদীয় গণতন্ত্রের সমস্যাসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্য ছিল এদেশের গণমানুষের জন্য একটি সুব্যবস্থিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করা। এ উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের সংবিধানে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা পরিলক্ষিত হয়।
বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের সমস্যাবলি : নিচে ৫টি সমস্যা উল্লেখ করা হলো :
১. রাজনৈতিক সহিংসতা : বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত হিংসাত্মক আচরণ গণতন্ত্র চর্চার পথকে কণ্টকাকীর্ণ করে তুলে। এখানে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের মীমাংসার উপায় হিসেবে সন্ত্রাস ও সহিংসতাকে ব্যবহার করা হয়।
২. পরমতসহিষ্ণুতার অভাব : গণতন্ত্র চর্চার সফলতার অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা এবং সমঝোতা। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান কেবল তখনই কার্যকরী হয়ে উঠে যখন রাজনৈতিক নেতারা পারস্পরিক আলাপ আলোচনা এবং যুক্তিসংগত সমঝোতায় রাজি থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশের সংসদীয় ব্যবস্থায় এর বিপরীত বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
৩. দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চার অনুপস্থিতি : বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দলের অভ্যন্তরীণ স্বাধীনতা তেমন নেই বললেই চলে। নেতৃত্ব নির্বাচন পদ্ধতি নেই, দলগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই। দলগুলোর নেতা নেত্রীরা সর্বময় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যা সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি বিরাট বাধা।
৪. উপদলীয় কোন্দল : বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো উপদলীয় কোন্দল। উপদলগুলো সময় ও অবস্থা বুঝে তাদের আনুগত্যের পরিবর্তন ঘটায় যা গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে অন্তরায়।
৫. সুশাসনের অভাব : বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অন্যতম সমস্যা হলো সুশাসনের অভাব। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অভাব। সরকারি দলের দৌরাত্ম্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি ব্যাপক মাত্রায় পরিলক্ষিত হয় যা গণতন্ত্রের জন্য বাধা হিসেবে কাজ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সংসদীয় গণতন্ত্র সফল করতে যে রাজনৈতিক সহাবস্থান, পারস্পরিক সমঝোতা, যোগ্য নেতৃত্ব, সুশাসন প্রভৃতি রাজনৈতিক সংস্কৃতির অভাব বিদ্যমান যা দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাবলি হিসেবে পরিগণিত হয়।