১৯৭২ সালের ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি আলোচনা কর।

অথবা, ১৯৭২ সালের ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শরণার্থীদের আশ্রয় দান, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান, মুজিবনগর সরকারকে সঠিকভাবে সাহায্য করা এবং যৌথবাহিনী গঠন করে চূড়ান্তভাবে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান ছিল অপরিহার্য। বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী এ বৃহৎ রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা সুদৃঢ় করতে ইন্দিরা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়. ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি ১৯৭২। নিচে এটি বর্ণনা করা হলো :
ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি : ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে আসেন। ১৯ মার্চ ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের পক্ষে
ইন্দিরা গান্ধী ২৫ বছরের জন্য এ মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
ভারত-বাংলাদেশ লালিত আদর্শ যথা : গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও শান্তি স্থাপনের জন্য এ
চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দুটি দেশ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে উভয় দেশের সীমান্তকে চিরন্তন
শান্তি ও বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হবে। এ চুক্তির মাধ্যমে-
১. ভারত ও বাংলাদেশে পারস্পরিক স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক আঞ্চলিকতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে এবং পরস্পরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকবে।
২.উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদের নিন্দা করবে।
৩.জোট নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করবে।
৪.স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে দুই দেশ সর্বদা যোগাযোগ রাখবে।
৫.বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, অর্থনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে।
৬. উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করবে এবং এ সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
৭.সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে।
৮.বিদ্যমান সম্পর্কের মধ্যে কোনো পক্ষ অন্যকোনো পক্ষের বিরুদ্ধে সামরিক চুক্তি করবে না।
৯. উভয় দেশ একে অপরের ক্ষতিসাধন থেকে বিরত থাকবে এবং একে অপরকে আক্রমণ করবে না।
১০. উভয়দেশ অন্য কোনো পক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হলে অন্য কোনো পক্ষকে সাহায্য করা যাবে না।
১১. চুক্তিটি ২৫ বছরের জন্য স্বাক্ষরিত হয় এবং নবায়নযোগ্য।
১২. এ চুক্তির কোনো ধারায় মতপার্থক্য সৃষ্টি হলে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের অন্যতম সাফল্য। এ চুক্তির মাধ্যমে দুটি দেশের মধ্যে সাধিত বিভিন্ন দিক দিয়ে সম্পর্ক সুদৃঢ় হয় এবং আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপিত হয়।