অথবা, বাংলাদেশের আবির্ভাবের কারণ কী ছিল?
উত্তর৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন তথা বাংলাদেশের অভ্যুদয় বিশ্বের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, দমনমূলক নীতি গ্রহণ, অধিকার হরণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ যে ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হয় যার ফলে বাঙালি জাতি অধিকার আদায়ের সংগ্রামে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।
বাংলাদেশের আবির্ভাবের ৫টি কারণ : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন সার্বভৌম রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটে। নিচে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৫টি কারণ উল্লেখ করা হলো। যথা :
১. ভৌগোলিক ব্যবধান : পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ব্যবধান ছিল হাজার হাজার মাইলের ভৌগোলিক ব্যবধান। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, আচার, প্রথা, খাদ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে ছিল ব্যাপক ব্যবধান। ফলে বৈষম্য ছিল প্রকট। যার ফলে বাংলাদেশের আবির্ভাব ঘটে।
২. পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আধিপত্যের নীতি : পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। যার ফলে বাংলাদেশের আবির্ভাব ঘটে ।
৩. সাংস্কৃতিক সংঘাত : পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক সংঘাত ছিল প্রবল। ভাষা আচার অনুষ্ঠান, বিশ্বাস, মূল্যবোধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সংঘাত ব্যাপক মাত্রায় পরিলক্ষিত হয় যা বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করে।
৪. অর্থনৈতিক শোষণ : ১৯৪৭ সালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান সৃষ্টি হয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী অর্থনৈতিক শোষণ শুরু করে পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে অর্থ পাচারসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সিংহভাগ পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় করতে থাকে।
৫. ঐতিহাসিক ছয়দফার প্রভাব : ১৯৬৬ সালের ছয়দফা ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ। ছয়দফায় উজ্জীবিত হয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক মতপার্থক্য ও বৈষম্য লক্ষ করা যায়। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শুরু থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের উপর শোষণ ও দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে যার ফলে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা আদায়ে মুক্তির সংগ্রামে লিপ্ত হয়। এর ফলে বাংলাদেশের আবির্ভাব ঘটে।