অথবা, শান্তি কমিটি গঠন সম্পর্কে বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পূর্ব পাকিস্তানের যে সকল সংগঠন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কর্মতৎপরতা শুরু করে এবং পাকিস্তান রক্ষার্থে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল তাদের মধ্যে শান্তি কমিটি ছিল অন্যতম। শান্তি কমিটি মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে।
শান্তি কমিটি : ৪ এপ্রিল ১২ জন আওয়ামী লীগ বিরোধী নেতা টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করেন। পিডিপি প্রধান নূরুল আমিনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন, গোলাম আজম, ফরিদ আহমেদ, খাজা খায়ের উদ্দীন, একিউ, এম শফিকুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান প্রমুখ। এরা পাকিস্তানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে নাগরিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়। টিক্কা খান ৯ এপ্রিল প্রাদেশিক গভর্নর হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তারপরই ১৪০ সদস্যের ‘ঢাকা নাগরিক শান্তি কমিটি’ গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটিতে ১৪০ জন সদস্য থাকলেও গোলাম আজমের নেতৃত্বেই তা পরিচালিত হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান হন মুসলিম লীগ নেতা খাজা খায়ের উদ্দীন। ঢাকা নাগরিক শান্তি কমিটির সদস্য ও নেতৃবৃন্দ ছিলেন জনাব এ. কিউ. এম. শফিকুল ইসলাম, মৌলভী ফরিদ আহমদ, অধ্যাপক গোলাম আজম, পীর মোহসেন উদ্দীন, জনাব মাহমুদ আলী, জনাব এ এস এম সোলায়মান, জনাব আবুল কাসেম এবং জনাব আতাউল হক খান প্রমুখ। কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি মূলত গোলাম আজমের নেতৃত্বে পরিচালিত হতো। অপরদিকে, শান্তি ও কল্যাণ কমিটি ফরিদ আহমদের নেতৃত্বে পরিচালিত হতো। শান্তি কমিটি গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করা এবং দেশকে বিচ্ছিন্নতা থেকে রক্ষা করে পাকিস্তান বজায় রাখা। শান্তি কমিটি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত গঠিত হয়। যার ফলে তৃণমূল পর্যায় গণহত্যা, ধর্ষণ, জমিদখল, স্বাধীনতাকামীদের ধরিয়ে দেওয়া, প্রয়োজনে হত্যা, লুট প্রভৃতিতে শান্তি কমিটি কখনো এককভাবে, কখনো হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করে এ সকল অপকর্ম করতে থাকে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শান্তি কমিটির ভূমিকা ছিল অত্যন্ত নিন্দনীয়। যুদ্ধকালীন সময়ে তাদের হাতে নির্যাতন ও নিপীড়নে বহু নারী-পুরুষ আহত ও নিহত হয়। ধর্ষণ, লুট, নির্যাতনে শান্তি কমিটির ভূমিকা ছিল মুখ্য। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে শান্তি কমিটির বিলুপ্তি ঘটে ।