১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী স্বতন্ত্র বাহিনীসমূহের বিবরণ দাও।

অথবা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী স্বতন্ত্র বাহিনীসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র বা আঞ্চলিক বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের সাক্ষর রাখে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং স্থানীয় এলাকা হানাদারমুক্ত রাখতে সক্ষম হন।
মুক্তিযুদ্ধে স্বতন্ত্র বাহিনীসমূহ : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্বতন্ত্র বাহিনী অতর্কিত আক্রমণ করে পাকিস্তানি বাহিনীর পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে দেয়। নিচে স্বতন্ত্র বাহিনীসমূহের উল্লেখ করা হলো। যথা :
১. মুজিব বাহিনী : মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত হয় মুজিব বাহিনী। আওয়ামী লীগ ও এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীদের নিয়ে গঠিত হয় মুজিব বাহিনী। প্রায় ৫ হাজার সদস্যের এ বাহিনীকে চারটি সেক্টরে ভাগ করে যুদ্ধে প্রেরণ করা হয়। মুজিব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল ১৯ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমান্ড। তোফায়েল আহমেদ, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও শেখ ফজলুল হক মনি। শেখ ফজলুল হক মনি ছিলেন এ বাহিনীর নেতৃত্বে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল উবানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে দেরাদুন পাহাড়ি এলাকায় এ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
২. কাদেরিয়া বাহিনী : কাদেরিয়া বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রতিহত করে কাদেরিয়া বাহিনী টাঙ্গাইলকে শত্রুমুক্ত করে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ছিলেন এ বাহিনীর প্রধান। জামালপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল কাদেরিয়া বাহিনী শত্রুমুক্ত রাখে।
৩. বাতেন বাহিনী : ১৯৭১ সালে মে মাসে বাতেন বাহিনী পাকিস্তানি হানাদারদের উপরে আক্রমণ চালায়। এরা মানিকগঞ্জ অঞ্চলে পাকবাহিনীকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।
৪. আফসার বাহিনী : ময়মনসিংহের ভালুকা, গফরগাঁওসহ স্থানীয় অঞ্চলে আফসার বাহিনী বহু রাজাকার হত্যাসহ কালীগঞ্জ ও ত্রিশাল এলাকা থেকে আসা পাকসেনাদের পরাজিত করে।
৫. হেমায়েত বাহিনী : কোটালিপাড়া, টুঙ্গিপাড়া, কালকিনি, টেকেরহাটে হেমায়েত বাহিনী পাকিস্তানি হাদাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালায়। হেমায়েত বাহিনী বৃহত্তর বরিশাল ও ফরিদপুর জেলার অনেক এলাকা মুক্ত করে।
৬. আকবর বাহিনী : মুক্তিযুদ্ধে আকবর বাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর উপর আক্রমণ শুরু করে। আকবর বাহিনী কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও ফরিদপুর হানাদারমুক্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়া লতিফ মির্জা বাহিনী, হালিম বাহিনী প্রভৃতি স্বতন্ত্র বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আঞ্চলিক বা স্বতন্ত্র বাহিনী ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রাণস্বরূপ। নিয়মিত বাহিনীর সাথে অনিয়মিত বাহিনী যেমন- গেরিলা বাহিনী, গণবাহিনী ও আঞ্চলিক বাহিনীর সমন্বয়ে পরিচালিত অভিযান ও প্রতিরোধ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে নস্যাৎ করে দেয়।