অথবা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধের পদ্ধতি উল্লেখ কর।
অথবা, গেরিলা যুদ্ধ কী?
উত্তরা৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা বাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। গেরিলা যুদ্ধ হলো এমন একটি কৌশল যা শত্রু সৈন্যের উপর হঠাৎ আক্রমণ ও পলায়ন নীতি গ্রহণ। গেরিলা যুদ্ধের মূল লক্ষ্য হলো শত্রুদের মনস্তাত্ত্বিক দৃঢ়তা বিনষ্ট করা এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে পরাজিত করে জয়লাভ করা।
গেরিলা যুদ্ধের কৌশল : অধ্যাপক তালুকদার মনিরুজ্জামান তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Bangladesh Revolution and its Aftermath’- ISBN : 9780836407662-এ মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর তিনটি কৌশলের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা :
১. একটি বৃহৎ গেরিলা বাহিনী গঠন করা ও তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তারা হানাদার বাহিনীকে নিঃশেষ করবে এবং হানাদার বাহিনী যাতে সুসংগঠিত হতে না পারে সেজন্য যোগাযোগ লাইন বিচ্ছিন্ন করবে। তারা
পাকিস্তানি সামরিক পোস্ট বা লরিসমূহের বিরুদ্ধে Hit and Run কার্যকলাপে নিয়োজিত থাকবে যা পাকবাহিনীর মধ্যে স্থায়ী উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করবে।
২. মুক্তিবাহিনীর নিয়মিত ইউনিটকে মুক্তি বা প্রসারিত করে গেরিলা বাহিনীর সহায়তার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সেক্টরসমূহে মোতায়েন করা।
৩. গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র মুক্তিবাহিনীর নিয়মিত ইউনিটকে দেওয়া এবং পাকিস্তানি বাহিনীর কেন্দ্রস্থলে আঘাত হানার লক্ষ্যে গঠিত বাহিনীর জন্য গেরিলারা লোক সংগ্রহ করবে। হানাদার বাহিনীর লজিস্টিক সাপোর্ট লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে তাদের মনোবল ভেঙে দিবে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে গেরিলারা তিনটি কৌশল গ্রহণ করে। নিচে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো :
ক. আত্মরক্ষামূলক : ২৫ মার্চ থেকে মে মাসের মাঝামাঝি সময় ছিল গেরিলা যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়। এ সময় গেরিলারা ছিল অপ্রস্তুত। এ সময় গেরিলারা আত্মরক্ষামূলক নীতি এবং অসংখ্য বিপদগ্রস্ত বাঙালির জীবনরক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করেছিল ।
খ. প্রশিক্ষণ ও কূটনৈতিক তৎপরতা : এ পর্যায়ে মে মাসের মধ্যবর্তী সময় থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিস্তৃত। সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারীরা গোপনে পলায়ন তৎপরতা অব্যাহত রাখে। এ পর্যায়ে গেরিলারা বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংস সাধন করে। গেরিলাদের আক্রমণে অনেক রাজাকার অস্ত্র ফেলে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র ও আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে গেরিলা বাহিনীকে উৎসাহ প্রদান করে।
গ. গেরিলা তৎপরতা : এ পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা প্রচণ্ডভাবে গেরিলা তৎপরতায় মনোনিবেশ করে। অক্টোবর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলারা দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। নভেম্বরের শেষের দিকে গেরিলারা তাঁদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়। গেরিলারা যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে
দেয়। সড়ক, ব্রিজ ধ্বংস ও রেললাইন তুলে ফেলে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা বাহিনী পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীকে অতর্কিত হামলা চালিয়ে দুর্বল ও নস্যাৎ করে দেয়। গেরিলা বাহিনীর সদস্যগণ সারাদেশে ব্যাপক তৎপরতা চালায়। মুক্তি বাহিনীর বিভিন্ন গেরিলা কৌশল ছিল অত্যন্ত সাহসী ও বীরত্বপূর্ণ, যার ফলে পাকবাহিনী কৌশলগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।