অথবা, সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : দীর্ঘদিনের শোষণ, নির্যাতন, বৈষম্য নীতির ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে যে অধিকার আদায়ের দাবি জাগ্রত হতে থাকে তার পরিপূর্ণ রূপ লাভ করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের অহংকার। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টি হয় ।
মুক্তিযুদ্ধ বা সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর গণহত্যা, লুণ্ঠন ও নারীনির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালিরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। প্রতিরোধ তীব্র হলে পাকবাহিনী সমগ্র দেশে বিভীষিকা সৃষ্টি করে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু, শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। সর্বস্তরের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। জেনারেল ওসমানীর নেতৃত্বে নিয়মিত বাহিনী সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয় এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ছাত্র, তরুণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, কৃষক ও শ্রমিকদের নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে মুক্তিবাহিনী গঠন করে মুক্তিযুদ্ধে
অংশগ্রহণ করেন । বিদ্রোহী সশস্ত্রবাহিনীরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলে প্রতিরোধ আরো শক্তিশালী হয়। গেরিলা বাহিনী বিক্ষিপ্তভাবে ও চোরাগুপ্তা হামলা করে পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়। ক্রমান্বয়ে পাকিস্তানি
বাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে। পাকিস্তানের জনসমর্থনহীন এ বাহিনী মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ ও তৎপরতার ফলে দিশেহারা হয়ে পড়ে। ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করলে যুদ্ধের গঞ্চি তীব্র হতে থাকে। অবশেষে ভারত- বাংলাদেশ যৌথবাহিনীর কাছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেল পৌনে ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে ৯৩ হাজার
সেনাসদস্যসহ লে. জে. নিয়াজী আত্মসমর্পণ করে। শেষ হয় দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ । বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালির অহংকার। সীমাহীন ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।