অথবা, আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলামের কার্যাবলি তুলে ধর।
উত্তর ভূমিকা : বাংলার মুসলিম নারী জাগরণে তথা নারী জাগরণের অগ্রদূত হলেন বেগম রোকেয়া।শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে তিনি অবহেলিত পশ্চাৎপদ মুসলিম নারী সমাজের মুক্তি অর্জনের জন্য নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। নারী মুক্তির জন্য তিনি আন্দোলনে ব্রতী হন এবং মুসলিম নারী সমিতি বা আহুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম গঠন করেন। নারী মুক্তিই ছিল এ সমিতি গঠনের মূল লক্ষ্য।
মুসলিম মহিলা সমিতি বা আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলামের কার্যাবলি : জাতিগঠনমূলক কাজে মুসলিম মহিলা সমিতি স্মরণীয় হয়ে আছে। আনুমান অজস্র বিধবা মেয়েকে অর্থ দান করেছে। চরিত্রহীন স্বামীর অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে বহু অসহায় গৃহবধূকে রক্ষা করেছে, বয়ঃপ্রাপ্ত দরিদ্র কুমারীকে সৎপাত্রস্থ করেছে, অভ্যবহার মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণে নানাভাবে সাহায্য করেছে। সমাজ পরিত্যক্তা দুস্থ মহিলা এবং অনাথ শিশুদের সাহায্যার্থে আজুমান বাস্তব ভূমিকা গ্রহণ করেছে। বাংলার অবরোধবন্দিনী মুসলমান নারীসমাজকে গৃহের অন্ধকার কোণ থেকে বাইরের দীপ্ত আলোয় আনা এবং সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে তাদের অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মুসলিম নারী সমিতির প্রশংসাযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। মুসলিম নারী সমিতির কার্যাবলি সম্পর্কে বেগম রোকেয়া বলেছেন, “কলকাতার মুসলমান নারীসমাজের গত বিশ বৎসরের ক্রমোন্নতির ধারাবাহিক ইতিহাস আলোচনা করলে স্পষ্টই বুঝা যায় এ সমিতি দীর্ঘকাল লোকচক্ষুর আড়ালে মুসলমান সমাজকে কতখানি ঋণী করে রেখেছে।” বাংলার মুসলমান নারীসমাজকে তাদের দুর্গতি সম্বন্ধে সচেতন করে ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আঞ্জুমানের কন্ঠস্বর ছিল অত্যন্ত সোচ্ছার। বস্তুত বেগম রোকেয়া দৃঢ় মনোবলের অধিকারিণী ছিলেন বলেই তাঁর পক্ষে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আধুনিক শিক্ষার প্রচার ও আঞ্জুমানের মাধ্যমে সামাজিক কল্যাণমূলক কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভবপর হয়েছিল। শিক্ষা সংক্রান্ত সর্ববিধ গঠনমূলক কাজে অংশগ্রহণেও ছিল তার সমান আগ্রহ। তিনি নারীমুক্তিকল্পে আবৃত সমাবেশেও যোগদান করতেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায়, বেগম রোকেয়ার প্রতিভায় বৈচিত্র্যের অপূর্ব সমাবেশ লক্ষণীয় পাশ্চাত্য শিক্ষার সংস্পর্শে এসে তার মনের জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছিল। জাতির বৃহত্তর কল্যাণ কামনায় সমাজদেহের অপরিহার্য অঙ্গ নারীসমাজের সর্বাঙ্গীণ মুক্তির জন্যে তিনি অন্তরে প্রবল আবেগ অনুভব করেছিলেন। শিক্ষাপ্রচার আন্দোলন ও অবরোধ প্রথার বিরুদ্ধে অভিযান সফল করে তোলার জন্য তিনি শক্তিশালী হাতে লেখনী ধারণ করেছিলেন। তাঁর জীবনের মহৎ উদ্দেশ্যের সঙ্গে তাঁর সাহিত্যচর্চার ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত।ধ্রুবতারার মত একটি লক্ষ্যের প্রতি তার সমস্ত কর্ম পরিচালিত হয়েছিল, সে লক্ষ্য নারী জাগরণ।