আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম গঠনের পটভূমি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে লেখ ।

অথবা, মুসলিম মহিলা সমিতি গঠনের পটভূমি ও এ সমিতির উদ্দেশ্য সংক্ষেপে তুলে ধর।
অথবা, আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম গঠনের ইতিহাস ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
বাংলার মুসলিম নারী জাগরণে তথা নারী জাগরণের অগ্রদূত হলেন বেগম রোকেয়া। শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে তিনি অবহেলিত পশ্চাৎপদ মুসলিম নারী সমাজের মুক্তি অর্জনের জন্য নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। নারী মুক্তির জন্য তিনি আন্দোলনে ব্রতী হন এবং মুসলিম নারী সমিতি বা আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম গঠন করেন। নারী মুক্তিই ছিল এ সমিতি গঠনের মূল লক্ষ্য।
আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম বা মুসলিম মহিলা সমিতি গঠনের পটভূমি ও উদ্দেশ্য : আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম গঠনের পটভূমি ও উদ্দেশ্য নিম্নে আলোচনা করা হলো :
পটভূমি : মুসলিম বাংলার নারী আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, উনিশ শতকের শেষভাগে মুসলমান মেয়েদের চলার পথকে সুগম করার জন্য মুসলমান ছেলেরা আন্তরিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছিল। তারা তাদের পাঠ্যজীবনে ১৮৮২ সালে ঢাকায় ‘সুহৃদ সম্মিলনী’ নামে এক সমিতি স্থাপন করেন। এ সমিতির উদ্যোক্তাদের মধ্যে অগ্রণী ছিলেন নোয়াখালীর মৌলবি আব্দুল আজিজ, মৌলবি ফজলুল করীম, মৌলবি বজলুর রহিম ও বরিশালের মৌলবি হিমায়িং উদ্দিন প্রমুখ। তারা বাংলার বিভিন্ন অংশের মেয়েদের ঘরে ঘরে অন্তঃপুরে শিক্ষার প্রচলন করেছিলেন। ১৮৮৬-৮৭ সালের
পর সুহৃদ সম্মিলনী সম্পর্কে আর কিছু জানা যায় নি। উনিশ শতকের শেষার্ধে ১৮৮৭ সালে নেতৃস্থানীয় হিন্দু মহিলাদের দ্বারা ‘সখি সমিতি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়েছিল। সমিতিটির প্রতিষ্ঠাত্রী ও সম্পাদিকা ছিলেন ঠাকুর পরিবারের সুকন্যা স্বর্ণকুমারী দেবী। স্বর্ণকুমারী দেবীর জাতিগঠনমূলক কার্যকলাপ প্রধানত হিন্দু নারীসমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এ প্রতিষ্ঠানটি নারীর শিক্ষাবিস্তারের উদ্দেশ্যে ব্যাপক কোন কার্যক্রম গ্রহণ করেছিল কি না তা জানা যায় নি।
উদ্দেশ্য : বিশ শতকের প্রথমার্ধে মুসলমান নারীসমাজের জন্য একটি পৃথক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হতে থাকে। ১৯১৬ সালে বেগম রোকেয়ার প্রচেষ্টায় স্থাপিত হয় ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম’ বা ‘মুসলিম মহিলা সমিতি’। মুসলিম নারীসমাজের পশ্চাৎপদতার কারণগুলো বেগম রোকেয়া অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন। মুসলমান নারীসমাজে যুগ যুগ ধরে যে সমস্ত কুপ্রথা ও কুসংস্কার প্রচলিত আছে, সেগুলো দূরীভূত করে মুসলমান নারীসমাজের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও মঙ্গল সাধনের মহতী উদ্দেশ্যে তিনি ‘আনুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম’ বা মুসলিম মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। বেগম রোকেয়ার জীবনব্যাপী সাধনার অন্যতম বিশিষ্ট ক্ষেত্র ছিল এ সমিতি।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায়, বেগম রোকেয়ার প্রতিভায় বৈচিত্র্যের অপূর্ব সমাবেশ লক্ষণীয়। পাশ্চাত্য শিক্ষার সংস্পর্শে এসে তার মনের জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছিল। জাতির বৃহত্তর কল্যাণ কামনায় সমাজদেহের অপরিহার্য অঙ্গ নারীসমাজের সর্বাঙ্গীণ মুক্তির জন্যে তিনি অন্তরে প্রবল আবেগ অনুভব করেছিলেন। শিক্ষাপ্রচার আন্দোলন ও অবরোধ প্রথার বিরুদ্ধে অভিযান সফল করে তোলার জন্য তিনি শক্তিশালী হাতে লেখনী ধারণ করেছিলেন। তাঁর জীবনের মহৎ উদ্দেশ্যের সঙ্গে তাঁর সাহিত্যচর্চার ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত।ধ্রুবতারার মত একটি লক্ষ্যের প্রতি তার সমস্ত কর্ম পরিচালিত হয়েছিল, সে লক্ষ্য নারী জাগরণ।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a6%b6-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%97%e0%a6%ae-%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%95%e0%a7%87/