অথবা, যৌতুক প্রথার কারণসমূহ লিখ
অথবা, কী কারণে বাংলাদেশে যৌতুক প্রথার আধিক্যতা লক্ষ্য করা যায়- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : বর্তমানে বাংলাদেশের নারীরা আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে অনেক দূর এগিয়েছে। আর্থসামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগ্যতার সাথে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু এখনো কিছু কিছু সামাজিক কুপ্রথা নারী সমাজকে আর্থসামাজিক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছে। নারীনির্যাতনের ক্ষেত্রেও এগুলো বড় হাতিয়ার। যৌতুক হচ্ছে তেমনি একটি সামাজিক কুপ্রথা।
বাংলাদেশে যৌতুক প্রথার কারণসমূহ : বাংলাদেশে যৌতুক প্রথার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। নিম্নে তার কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলো :
১. দারিদ্র্য : আমাদের দেশের একটি বড় সমস্যা হলো দারিদ্র্য। তাই অর্থের অভাবে অনেকে বিয়ে করতে পারে না। অনেকে মনে করে, যৌতুক নিয়ে বিয়ে করে সেই অর্থ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে অভাব-অনটন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। সেজন্য যৌতুকের দিকে ধাবিত হয়।
২. নারীদের পরনির্ভরশীলতা : বাংলাদেশের সমাজের যে স্তরেই হোক না কেন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে বিয়েতে কমবেশি যৌতুক দিতেই হয়। কারণ পুরুষের উপর নারীর মূলত অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা এজন্য দায়ী।
৩. মহিলাদের প্রতি ঋণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি : আমাদের সমাজ যেহেতু পুরুষশাসিত সমাজ। আর পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা অসহায় ও পুরুষের করুণার পাত্র হিসেবে টিকে থাকে, যা পাত্রপক্ষকে যৌতুক দাবি করতে উৎসাহিত করে।
৪. প্রতিষ্ঠা লাভের মনোভাব : সামাজিক প্রতিষ্ঠা লাভের মোহে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো যৌতুক দান ও গ্রহণ করতে আগ্রহী। বেকার ছেলেরা যৌতুকের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে চায়। অনেকে কন্যার পিতার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা, স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী, টেলিভিশন, ভিসিডি, ফ্রিজ, গাড়ি, ফ্লাট বাড়ি ইত্যাদি আদায় করে থাকে।
এগুলোকে যৌতুক না বলে বলা হয় Gift বা উপহার।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায়, যৌতুকের পিছনে নানা রকম সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণ বিদ্যমান। তাছাড়া এটি সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা হিসেবে দিন দিন বেড়েই
চলেছে। এ চাহিদা এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, একে কেন্দ্র করে শুধু ভুল বুঝাবুঝিই নয়, বিবাহবিচ্ছেদ, হত্যাকাণ্ড, রাহাজানিও ঘটছে।