✍️বাংলাদেশের কৃষিখাতের যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকীরণের পথে বাধাগুলো কী কী ?

[ad_1]

✍️বাংলাদেশের কৃষিখাতের যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকীরণের পথে বাধাগুলো কী কী ?

উত্তর : বাংলাদেশের কৃষিখাতের যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকরণের পথে বাধাসমূহ নিম্নরূপ :

১. দরিদ্রতা : বাংলাদেশের কৃষিখাতে যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকায়নের পথে অন্যতম প্রধান বাধা হলো কৃষকের দারিদ্র্যতা ।

২. ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনি : যান্ত্রিকীকরণের পথে একটি প্রধান বাধা হলো এই যে , বাংলাদেশের কৃষিজমি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত ।

৩. বিছিন্ন জমি : কৃষি পরিবারের জমিগুলো সাধারণত একত্রে থাকে না বরং মাঠের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকে ।

৪. বেকারত্বের ভয় : কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে কৃষি পরিবারে কর্মক্ষম সদস্যদের বেকার হওয়ার ভয় থাকে ।

৫. অবকাঠামোর অভাব : গ্রামাঞ্চলে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে কৃষিক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণ তথা আধুনিকীকরণ সম্প্রসারিত হচ্ছে ।

৬. কারিগরি জ্ঞানের অভাৰ : কৃষিখাতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার নির্ভর করে কারিগরি জ্ঞান এবং কৃষি বিষয়ক শিক্ষার উপর ।

৭. ঋণের অভাব : কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্র ও উন্নত উপকরণ ব্যবহারের জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন ।

৮. বৈদেশিক মুদ্রার অভাব : যন্ত্রায়ন ও আধুনিকায়নের জন্য উন্নত যন্ত্রপাতি , উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি .

৯. প্রতিকূল ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা : বাংলাদেশের ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ভূমি ব্যবস্থাপনা যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকায়নের অনুকূল নয় ।

১০. সরকারি ব্যয়ের স্বল্পতা : সরকারের সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে কৃষিখাতে ব্যয়বরাদ্দ আশানুরূপ হচ্ছে না । ১১. সঠিক নীতিমালার অভাব : বাংলাদেশের কৃষিকে আধুনিকায়ন করার জন্য এখনো পর্যন্ত কোন লাগসই নীতিমালা তৈরি হয় নি ।

✍️ কৃষি খামার কী ?

উত্তর : কৃষি খামার : কৃষি খামারের সন্তোষজনক সজ্ঞা প্রদান করা খুবই দুরূহ । তবে সাধারণভাবে কৃষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী একককে কৃষি খামার বলে । অন্যদিকে , একজন সংগঠকের অধীনে যে পরিমাণ জমি চাষাবাদ করা হয় তাকে কৃষি জোত বলে । একজন কৃষক তার অধীনস্থ কৃষি জোতে কি কি শস্য , কি পরিমাণে এবং কোন পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হবে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী একককে খামার বলে । অনেক সময় একজন সংগঠক বিভিন্ন স্থানে একাধিক কৃষি জোত নিয়ন্ত্রণ করে থাকে । সুতরাং খামার বলতে একজন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংগঠকের কৃষি জোতকে বুঝায় যা কৃষি কিংবা কৃষি সংশ্লিষ্ট পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত থাকে ।

প্রকারভেদ : কৃষি খামারকে প্রধানত বিভিন্নভাগে ভাগ করা যায় । যেমন : –

১. উৎপাদনের উদ্দেশ্য ।

২. ফসল উৎপাদনের ধরন ।

৩. খামারের মালিকানা । উৎপাদনের উদ্দেশ্যের দিক হতে বিবেচনা করলে কৃষি খামার নিম্নোক্ত দুধরনের হতে পারে । যেমন :

ক . জীবন ধারণোপযোগী খামার : যদি কৃষক তার খামার থেকে পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যই উৎপাদন করে তবে তাকে জীবনধারণোপযোগী খামার বলে ।

খ . বাণিজ্যিক খামার : যে খামারের উৎপাদন ব্যবস্থা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য পরিচালিত হয় তাকে বাণিজ্যিক খামার বলে । ফসল উৎপাদনের ধরন অনুযায়ী আবার কৃষি খামারকে ২ ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন :

ক . বিশেষায়িত খামার ।

খ . বহুমুখী খামার ।

✍️ বাংলাদেশে ফসল বহুমুখীকরণের পক্ষে যুক্তিসমূহ কী কী ?

উত্তর : বাংলাদেশের ফসল বহুমুখীকরণের পক্ষে যুক্তি : কৃষি উন্নয়নের কৌশল হিসেবে ফসল বহুমুখীকরণের সুবিধাগুলো নিম্নরূপ :

১. চাহিদা সৃষ্টি : বাংলাদেশের অর্থনীতির মধ্যে কৃষি বৃহত্তম খাত । শিল্প বা সার্ভিস খাত এখনো যথেষ্ট প্রসার লাভ করে নি , আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশও সহজ নয় । অতএব কৃষি খাতের ভেতরেই কৃষি পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি করতে হবে । তাই শুধু ধান উৎপাদন করলে ধানের পর্যাপ্ত চাহিদা থাকবে না , বরং কৃষি খাতে একাধিক পণ্য উৎপন্ন হলে পণ্যগুলো পরস্পরের চাহিদা সৃষ্টি করবে । অতএব বাংলাদেশে ফসলের বহুমুখীকরণ প্রয়োজন ।

২. ভূমির ক্ষমতা সংরক্ষণ : একই জমিতে বছরের পর বছর একই ফসল উৎপাদন করলে জমির উৎপাদন ক্ষমতা বিনষ্ট হয় । পক্ষান্তরে , বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করলে গুণাবলির ভারসাম্য বজায় থাকে । অতএব ভূমির উৎপাদন ক্ষমতা সংরক্ষণের জন্য ফসলের বহুমুখীকরণ আবশ্যক ।

৩. সেচ ব্যবহার দক্ষতা : ধান ছাড়া অন্যান্য ফসলের জন্যও পানি সেচের প্রয়োজন হয় । অতএব সেচ সেবার বাজারে দক্ষতা অর্জিত হবে যদি ফসলের বহুমুখীকরণ করা হয় । বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফসলের জন্য পানির চাহিদা সৃষ্টি হলে সেচ সেবার দক্ষ ব্যবহার সম্ভব হবে ।

৪. ঝুঁকি হ্রাস : এক ফসলের পরিবর্তে অনেক ফসল উৎপাদন করলে কৃষকের ঝুঁকি হ্রাস পায় । একটি ফসল বিনষ্ট হলেও অন্য ফসল থেকে কৃষকের আয় উপার্জনের সম্ভাবনা থাকে ।

৫. কৃষকের আয় বৃদ্ধি : ফসল বহুমুখীকরণের কারণে সারা বছর খামারে কোন না কোন ফসল থাকে । ফলে কৃষক অধিক আয় উপার্জন করে । এছাড়া একটি পণ্যের যোগান বেড়ে গিয়ে মন্দা সৃষ্টি হয় না বলে কৃষক ন্যায্য দাম পায় । ফলে কৃষকের আয় বাড়ে ।

৬. পুষ্টি : ফসল বহুমুখীকরণের ফলে মানুষ খাদ্যে বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে । ফলে খাদ্য অধিক পুষ্টিকর ও সমৃদ্ধ হয় ।

✍️ কৃষি যান্ত্রিকীকরণ কী ?

উত্তর : কৃষি যান্ত্রিকীকরণ : সাধারণত কৃষির যান্ত্রিকীকরণ বলতে কৃষিকার্যের বিভিন্ন পর্যায়ে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারকে বুঝায় । বৈজ্ঞানিক উপায়ে আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্য কৃষিকাজ পরিচালনা করাকে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ বলা হয় । কৃষির যান্ত্রিকীকরণ বলতে প্রধানত দুটি জিনিসকে বুঝায় ।

প্রথমত , মান্ধাতার আমলের যন্ত্রপাতির পরিবর্তে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার । দ্বিতীয়ত , কৃষিক্ষেত্রে পশু ও মনুষ্য শক্তির পরিবর্তে যন্ত্রশক্তি প্রয়োগ । বাংলাদেশে এখনো বৃষিকার্যে লাঙল , জোয়াল , মই , কাস্তে , কোদাল , সেউত , দোন প্রভৃতি ব্যবহৃত হয় । কিন্তু বর্তমান যুগে এসব সনাতন কৃষি যন্ত্রপাতির অচল হয়ে পড়েছে । বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বর্তমানে কৃষিকাজে ট্রাক্টর , হারভেস্টার , বুলডোজার প্রভৃতি ব্যবহার করে আমাদের চেয়ে চার পাচগুণ বেশি ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে । অতএব বলা যায় যে , কৃষির যান্ত্রিকীকরণ বলতে কৃষি শ্রম নিবিড় প্রযুক্তির পরিবর্তে পুঁজি নিবিড় প্রযুক্তির ব্যবহারকে বুঝায় ।

✍️বাংলাদেশে ক্ষুদ্র কৃষি খামারের সমস্যাসমূহ আলোচনা কর ।

উত্তর : বাংলাদেশে ক্ষুদ্র কৃষি খামারের ক্ষেত্রে বহুবিধ সমস্যা দেখা দেয় । নিম্নে কতকগুলো সমস্যার কথা উল্লেখ করা হলো :

১. উৎপাদন সমস্যা : ক্ষুদ্র কৃষি খামারে বৃহৎ কৃষি খামারের তুলনায় বিনিয়োগ ব্যয় বেশি । অধ্যাপক Glennson এর মতে ক্ষুদ্র কৃষি খামারগুলোতে বাণিজ্যিক খামারগুলোর অপেক্ষা বিনিয়োগ ব্যয় বেশি পড়ে । উৎপাদন ব্যবস্থা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লাভজনক খামারেও পরিণত করা যায় না । ক্ষুদ্র খামারগুলোতে উপকরণ খরচ বেশি হয় বলে উৎপাদন প্রক্রিয়া বাচাই প্রকল্পে সমস্যার সৃষ্টি হয় ।

২. বিশেষায়ন ও যান্ত্রিকীকরণ সমস্যা : ক্ষুদ্র খামারে উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিশেষায়ন ও যান্ত্রিকীকরণ সম্ভব হয় না । ফলে কাম্য মাত্রায় উৎপাদন নির্ধারণ করা যায় না ।

৩. উফশী বীজ ব্যবহার সমস্যা : উফশী জাতীয় বীজ ব্যবহারের জন্য প্রায় ক্ষেত্রে বাণিজ্যিকভিত্তিক খামার গড়ে . তুলতে হয় । কারণ উফশী বীজ ব্যবহারে কাম্য উৎপাদন করতে সেচ ও যান্ত্রিক ক্ষুদ্র খামারের ক্ষেত্রে এ জাতীয় বীজ • ব্যবহার করা যায় না বলে উৎপাদন কম হয় ।

৪. আর্থিক সমস্যা : ক্ষুদ্রায়তন খামারের উৎপাদিত দ্রব্য শুধু ভোগের জন্য উৎপাদন হয় । যার খুব অল্প পরিমাণ উদ্বৃত্ত থাকে এবং তা বাজারে বিক্রি হয় । এ থেকে প্রাপ্ত আয় খুবই নগণ্য । কিন্তু বিশেষায়িত খামারের উৎপাদন পুরোটা বাণিজ্যিকভিত্তিক ও মুনাফার উদ্দেশ্যে উৎপাদন হয় বলে আর্থিক দিক থেকে অনেক সুবিধা হয় ।

৫. খাদ্য সমস্যা : ক্ষুদ্রায়তন খামার ব্যবস্থায় উৎপাদন কম হয় বলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব নয় । জমি খণ্ড বিখণ্ড ও বিচ্ছিন্নতার কারণে যান্ত্রিক উপায়ে চাষাবাদ সেচ ব্যবস্থা প্রয়োগ , উফশী জাতীয় বীজ , বিপণন কার্যক্রম গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না । ফলস্বরূপ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে ।

✍️ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খাদ্য শস্যের গুরুত্ব আলোচনা কর ।

উত্তর ভূমিকা : বাংলাদেশের অর্থনীতির মধ্যে বৃহত্তম উৎপাদন খাত কৃষি । দেশের জি.ডি.পিতে কৃষিখাতের অবদান প্রায় ৩২ % এবং কৃষিতে মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৬৩ % নিয়োজিত আছে । এ গুরুত্বপূর্ণ কৃষিখাতের প্রধান উৎপন্ন দ্রব্য হচ্ছে খাদ্যশস্য । খাদ্য শস্যের গুরুত্ব : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খাদ্যশস্যের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :

১. খাদ্যশস্য উৎপাদনে ভূমি : বাংলাদেশের চাষযোগ্য জমির প্রায় ৮৫ % খাদ্য উৎপাদনে নিয়োজিত আছে । শুধু ধান উৎপাদনে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ভূমির পরিমাণ ছিল ২৮২.৩৬ লক্ষ একর । অনুরূপভাবে গম , ডাল তৈলবীজের উৎপাদনের ঐ বছরে যথাক্রমে ৯.২২ . ৫.৯৩ ও ৮.৭০ লক্ষ একর জমি নিয়োজিত ছিল ।

২. জাতীয় আয়ের অবদান : বাংলাদেশ জি.ডি.পি. তে প্রায় ২৫ % অবদান রাখে খাদ্যশস্য । খাদ্যশস্যের মধ্যে ধান প্রধান খাদ্যশস্য । মোট খাদ্যের ৭০ % হচ্ছে ধান ।

৩. কর্মসংস্থানের অবদান : বাংলাদেশে কৃষিতে প্রায় শ্রম নিয়োজিত থাকে প্রায় ৪৩ % । কিন্তু কৃষিখাতে প্রায় তিন চতুর্থাংশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে নিয়োজিত আছে । কর্মসংস্থান খাদ্যশস্য উৎপাদনে অর্থনীতিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে ।

৪. খাদ্যের যোগান : বাংলাদেশের জনগণের আয়ের ৮০ % ব্যয় হয় খাদ্য ক্রয়ে । আর এ খাদ্যের যোগান দেয় কৃষিখাত । আমাদের কৃষি খাতে যে খাদ্য উৎপাদন হয় তা খাদ্য ঘাটতি পূরণ হয় না । বছরে প্রায় ২০ লক্ষ টন খাদ্য আমদানি করতে হয় । অতএব এদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন অতি গুরুত্বপূর্ণ ।

৫. রপ্তানি : সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে কিছু উন্নতমানের চাল রপ্তানি শুরু হয়েছে । দেশে ঘাটতি থাকা অবস্থায় কিছু উন্নতমানে ডাল উদ্বৃত্ত আছে । উন্নতমানের ডাল রপ্তানির মাধ্যমে খাদ্যশস্য উৎপাদনে গুরুত্ব প্রকাশ পাচ্ছে ।

উপসংহার : অতএব বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতীয়মান হয় যে , বাংলাদেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন অতি গুরুত্বপূর্ণ । অধিক পরিমাণে ধান উৎপাদনের ফলে বিগত কয়েক বছরে ধানের দাম ন্যায্যমূল্যের নিচে পড়ে যেতে দেখা গেছে । তাই খাদ্য শস্যের পরিবর্তে অন্য ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ফসলের বহুমুখীকরণের কৌশল উপযোগী বলে অনেকে মনে করেন ।

[ad_2]