১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র ও সাধারণ মানুষের অবদান আলোচনা কর।

অথবা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র ও সাধারণ মানুষের ভূমিকা মূল্যায়ন কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাতায় যাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে তাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ও সাধারণ মানুষ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘৪৮ এ রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে মি. জিন্নাহর বিতর্কমূলক মন্তব্যের প্রতিবাদে জন্ম নিয়েছিল যে স্বাধিকার, তারই পথ ধরে ‘৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলনে তাদের অবদান বাঙালি জাতির কাছে থাকবে চিরভাস্বর ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রসমাজের অবদান : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এক দিনে আসেনি। তা এসেছে বিভিন্ন আন্দোলন আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। আর এসব আন্দোলনের নেতৃত্বে যারা ছিলেন তারা হলেন এদেশের
ছাত্রসমাজ। নিচে মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান আলোচনা করা হলো :
১. মুক্তিযুদ্ধের পথ নির্দেশ : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মূলত পথ নির্দেশকের ভূমিকায় ছাত্রসমাজ ভূমিকা পালন করেছিল।
বাংলাদেশের পতাকা থেকে শুরু করে স্বাধীনতার ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধে ছাত্ররাই পথ নির্দেশকের ভূমিকা পালন করেছিল ।
২. স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র : মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগ্রামী ছাত্রনেতারা বাংলাদেশের জনগণের উদ্দেশ্যে মূল্যবান ভাষণ রেখে মুক্তিযুদ্ধকে গণমানুষের সংগ্রামে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছিলেন।
৩. মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ ও বিভিন্ন সহযোগিতা : ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল এবং দেশে- বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তারা প্রচারাভিযানে ভূমিকা রেখেছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষ : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের অবদান অসামান্য। নিচে তাদের অবদানগুলো তুলে ধরা হলো :
১. মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালি বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল। সাধারণ মানুষ গণবাহিনীতে যোগ দিয়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিল ।
২. মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা : যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল তাদের খাবার সরবরাহ করা, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
৩. খবরাখবর সরবরাহ : মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হানাদার বাহিনীর খবরাখবর সরবরাহ করত। সাধারণ মানুষ হানাদার বাহিনীর অবস্থান, তাদের ক্যাম্প, অপারেশন ইত্যাদির খবরাখবর প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল যা স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র জনতার অবদান অনস্বীকার্য। কেননা তাদের অবদান বাংলার পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাদের আত্মত্যাগ আর রক্তঝরা খুন বাংলার মাটিতে মিশে আছে। তাদেরকে বাঙালি চিরদিন স্মরণ করবে।