১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নিয়মিত বাহিনী সম্পর্কে কী জান?

অথবা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নিয়মিত বাহিনী সম্পর্কে উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিয়মিত বাহিনী অসীম সাহসিকতাপূর্ণ বীরত্ব প্রদর্শন করেছিল। ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণার পরপরই পূর্ব বাংলার মানুষ স্বাধীনতার প্রস্তুতি শুরু করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে পূর্ব বাংলার জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিরোধ শুরু করে এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা হলে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে আঞ্চলিক বাহিনী, গণবাহিনী, মুজিব বাহিনী এবং নিয়মিত বাহিনী একত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে ফেলে। নিয়মিত বাহিনীর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ।
নিয়মিত বাহিনী : মুক্তিযুদ্ধের সময় নিয়মিত বাহিনীকে আবার কয়েকটি স্তরে ভাগ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। যেমন-
১. মুক্তিফৌজ : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত সশস্ত্রবাহিনী শুরুতে এদের নাম ছিল মুক্তিফৌজ। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইউনিটগুলোর সমন্বয়ে বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে এ বাহিনী গঠিত হয়। আধা সামরিক বাহিনী বা যুবদের পর্যায়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৮টি ব্যাটালিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নিয়মিত বাহিনীদের সেক্টর ট্রপসে নেওয়া হয়। ইস্ট
বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্যাটালিয়ান নিয়ে ৩টি ব্রিগেড ফোর্স গঠন করা হয়। নিয়মিত বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮,৬০০ জন।
২. বাংলাদেশ নৌবাহিনী : ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে / ড. আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন] বাংলাদেশ নৌবাহিনী গঠন করা হয়। প্রাথমিক অবস্থায় এ বাহিনীর ছিল দুটি জাহাজ এবং ৪৫ জন নৌসদস্য। জাহাজ দুটি পাকিস্তানি নৌবহরের উপর বেশ কয়েকটি সফল আক্রমণ পরিচালনা করে। নৌবাহিনী সফল অভিযান চালিয়ে কোস্টার, ট্যাংকার, টাগ ও বড় জাহাজের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।
৩. বিমানবাহিনী : ভারতের ন্যাগাল্যান্ড রাজ্যের ডিমাপুরে ২৮ সেপ্টেম্বর এয়ার কমোডর এ. কে. খোন্দকারের অধিনায়কত্বে এর কর্মকাণ্ড শুরু হয়। প্রারম্ভিক অবস্থায় এটি ১৮ জন কর্মকর্তা ৫০ জন কলাকুশলী এবং ২টি উড়োজাহাজ ও ১টি হেলিকপ্টারের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। বিমানবাহিনী পাকিস্তানি লক্ষ্যবস্তুসমূহের উপর বারোটির অধিক আক্রমণ চালায় এবং ডিসেম্বর মাসের গোড়ার দিকে ভারতীয় আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ের যথেষ্ট সফলকাম হন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিয়মিত বাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ঝটিকা আক্রমণ, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস, কৌশলগত সুবিধা লাভ, বিচ্ছিন্ন শত্রু সেনাদের নির্মূল করার লক্ষ্যে তাদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করা ছিল নিয়মিত বাহিনীর কর্মকাণ্ড। মুক্তিযুদ্ধে নিয়মিত বাহিনীর ত্যাগ ও সফলতা জাতি শ্রদ্ধাচিত্তে স্মরণ করে থাকে।