অথবা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর সাফল্যের কারণ উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর সাফল্য ছিল অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল । গেরিলা বাহিনীর বীরত্ব ও অতর্কিত আক্রমণ পাকিস্তানি বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে। গেরিলা আক্রমণের সাফল্য মুক্তিযুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তি বয়ে আনে।
গেরিলা যুদ্ধের সাফল্য : প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলারা দেশমাতৃকার মুক্তির শপথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। নিচে এ বাহিনীর সাফল্যের কারণ বর্ণনা করা হলো :
১. জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ : পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে বাঙালিদের উপর গণহত্যা শুরু করে। গণহত্যা ও ধ্বংসলীলায় জনমনে প্রচণ্ড ক্ষোভের সঞ্চার হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর এ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাঙালি সমাজ জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয় এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলে।
২. বৈদেশিক সহায়তা : গেরিলা যুদ্ধের সাফল্যে বৈদেশিক সহায়তা অন্যতম ছিল। অস্ত্রশস্ত্র, প্রশিক্ষণ, খাদ্য ঔষধপত্র, আশ্রয় দিয়ে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের অনেক দেশ গেরিলা বাহিনীকে সহায়তা প্রদান করে। বহির্বিশ্বের সহায়তা ছাড়া দ্রুত স্বাধীনতা লাভ সম্ভব ছিল না।
৩. গেরিলা প্রশিক্ষণ : মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা প্রশিক্ষণ ছিল অত্যন্ত দক্ষ ও উপযোগী। গেরিলাদের আক্রমণের কৌশল ছিল অতর্কিত এবং আক্রমণ করে দ্রুত পলায়ন, যা পাকিস্তানি বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে দেয়।
৪. আন্তর্জাতিক জনমত : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন গেরিলা বাহিনীকে উৎসাহ ও উদ্দীপনা যোগায়। আন্তর্জাতিক সমর্থনের ফলে গেরিলারা দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে যুদ্ধ করে।
৫. স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ : স্বাধীনতা ও মুক্তির নেশায় বাঙালিরা ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে। গেরিলারা সংঘবদ্ধভাবে আক্রমণ করে হানাদার বাহিনীকে দুর্বল করে দেয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে শহর ও গ্রামাঞ্চলে গেরিলা তৎপরতা জোরদার করা হয়। মুক্ত অঞ্চল থেকে গেরিলারা পাকবাহিনীর উপর কমান্ডো হামলা চালাতো এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্র কেড়ে নিত। ২৫ মার্চ, ৭১ থেকে ৩ ডিসেম্বর, ৭১ পর্যন্ত ২৫,০০০ পাকসেনাকে হত্যা করা হয় এবং ৫০০ থেকে ৬০০ রাজাকার বন্দি করা
হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন, সড়ক, ব্রিজ ধ্বংস ও রেললাইন তুলে ফেলে গেরিলারা সুতরাং মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর সাফল্যের কৌশল ছিল বাস্তব ও সময় উপযোগী।