অর্থবা, হাসপাতাল সমাজকর্মের কর্মসূচিসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, চিকিৎসা সমাজসেবার কর্মসূচিসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, চিকিৎসা সমাজকর্মের কর্মসূচি আলোচনা কর।
উত্তরা।৷ ভূমিকা : আধুনিক সমাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখার নাম হলো চিকিৎসা সমাজকর্ম (Hospital Social Work)। সাধারণ জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য সমাজকল্যাণের যে কর্মসূচি পরিচালিত হয় তাকে চিকিৎসা সমাজকর্ম বলা হয়। চিকিৎসা সমাজকর্ম মূলত ব্যক্তিকেন্দ্রিক সমাজকর্ম পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল এমন একটি কার্যক্রম, যার মাধ্যমে পীড়িত মানুষের জীবনে সামগ্রিক কল্যাণসাধন করা হয়। চিকিৎসা সমাজকর্মকে অনেকে হাসপাতাল সমাজকর্ম (Hospital Social Work) বা হাসপাতাল সমাজসেবা (Hospital Social Service ) বলেও অভিহিত করেন। ১৯০৫ সালে আমেরিকায় সর্বপ্রথম হাসপাতাল সমাজসেবা চালু করা হয়।
হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মসূচি : বর্তমানে বাংলাদেশের ৮৭টি ইউনিটে হাসপাতাল কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।নিম্নে বাংলাদেশে হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মসূচিসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা প্রাপ্তিতে সহায়তা : হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মসূচি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সমস্যাগ্রস্ত, অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা প্রাপ্তিতে সহায়তা করা।
২. চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ : হাসপাতাল সমাজসেবা অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের প্রয়োজনে ঔষধ, রক্ত, পথ্য, বস্ত্র, চশমা, ক্র্যাচ এবং কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রদ৷ নসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করে থাকে।
৩. দুঃস্থ ও অসহায় রোগীদের শনাক্তকরণ : হাসপাতালে যারা ভর্তি হন তাদের সকলেই দুঃস্থ রোগী নয়। বরং অনেক রোগীর আর্থিক অবস্থা ভালো। এজন্য হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয় ও রোগী কল্যাণ সমিতি হাসপাতালে আগত রোগীদের মধ্যে যারা দুঃস্থ ও অসহায় তাদের সনাক্ত করে থাকে এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
৪. মানসিক রোগী সেবা : হাসপাতালে অনেক সময় মানসিক ও আবেগীয় সমস্যাগ্রস্ত রোগীরাও আসেন। এসব রোগীদের মানসিক চিকিৎসা প্রদানে হাসপাতাল সমাজকর্মীরা (হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মরত) বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেন।
৫. বেবি হোমে ভর্তি : অনেক সময় ছোট্ট শিশুকে অনেকে হাসপাতালে রেখে চলে যায়। এসব শিশুর প্রকৃত পরিচয়ও জানা যায় না। এসব শিশুদের হাসপাতাল সমাজকর্মীরা বেবি হোমে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন।
৬. রোগীদের আর্থিক সহায়তা : হাসপাতাল সমাজসেবা প্রয়োজনবোধে রোগীদের আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করে.
থাকে। অনেক রোগী আছে যাদের ঔষধ বা পথ্য কেনার কোন সামর্থ্য থাকে না সেসব রোগীদের হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয় বা রোগী কল্যাণ সমিতি আর্থিক সাহায্য প্রদান করে থাকে।
৭. ক্ষুদ্রঋণ প্রদান : হাসপাতাল সমাজসেবা প্রয়োজনবোধে দুঃস্থ ও অসহায় রোগীদের চিকিৎসার স্বার্থে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানেরও ব্যবস্থা করে থাকে।
৮. রোগ নির্ণয়ে সহায়তা : একজন রোগীর রোগগ্রস্ত হওয়ার জন্য অনেক উপাদান কাজ করে। যেমন- আর্থসামাজিক দুরবস্থা, মানসিক দৈন্যতা, বঞ্চনা, প্রতারিত হওয়া ইত্যাদি। হাসপাতাল সমাজকর্ম এ সকল তথ্যসংগ্রহ করে ডাক্তারকে রোগ নির্ণয়ে সহযোগিতা করতে পারে।
৯. পুষ্টি ও পরিচ্ছন্নতা : হাসপাতাল সমাজসেবা রোগীদের বা তাদের পরিবারবর্গকে পুষ্টি ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক জ্ঞানদান করতে পারে। এর মাধ্যমে রোগী ও তার পরিবারের পুষ্টি জ্ঞান বৃদ্ধি পায় ।
১০. স্বাভাবিক জীবনযাপনে সহায়তা : রোগের কারণে পরিবারে অনাকাঙ্ক্ষিত হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপনকারীদের স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনে হাসপাতাল সমাজসেবা সহায়তা করে থাকে।
১১. ফ্রি বেডে ভর্তির ব্যবস্থা : হাসপাতাল সমাজকর্মী বা চিকিৎসা
সমাজকর্মীগণ অসহায় ও দুঃস্থ রোগীদের ফ্রি বেডে ভর্তিতে সহায়তা প্রদান করেন।
১২. রেফার : চিকিৎসার প্রয়োজনে রোগীদের অন্য হাসপাতালে/চিকিৎসা কেন্দ্রে রেফার/স্থানান্তরের ক্ষেত্রেও হাসপাতাল সমাজসেবা সহায়তা প্রদান করেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, রোগীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।এছাড়া চিকিৎসাকালীন ও চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে রোগী ও তার পরিবারের মানসিক টেনশন দূর করা এবং প্রয়োজনবোধে রোগী পুনর্বাসনেও হাসপাতাল সমাজসেবা কাজ করে থাকে।