অথবা, কৰি ‘বনলতা সেন’ কবিতার ভাষ্যানুসারে কোথায়, কীভাবে হেঁটেছেন তার পরিচয় দাও।
উৎস : ব্যাখ্যেয় পঙক্তিগুলো কবি জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কবিতার অন্তর্গত।
প্রসঙ্গ : অতৃপ্ত মানবসত্তার অন্তহীন পথ চলার বর্ণনা প্রসঙ্গে কবি এ অসাধারণ পঙক্তিগুলো রচনা করেছেন ।
বিশ্লেষণ : বহু শতাব্দী ধরে মানুষ এ পৃথিবীতে বসবাস করে চলেছে। বহু সভ্যতার নির্মাণ তারা করেছে, ধ্বংস সাধনও করেছে বহু সভ্যতার। কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অনেক কিছু। রাজা বিম্বিসার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হর্ষভ রাজবংশ। ভারতের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যকে ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ করেছিলেন অশোক। ঘটিয়েছিলেন কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহ রক্তপাত এবং প্রবল প্রতাগের অধিকারী করে তুলেছিলেন মৌর্য রাজবংশকে। কিন্তু তাঁরা সবাই এখন বিস্তৃত প্রায় ধূসর ইতিহাসের অধিবাসী। বর্তমানের খুব কম মানুষই জানে তাদের কথা। আবার বর্তমানের যে মানুষ আপন অস্তিত্বের উজ্জ্বলতা নিয়ে আলোকিত করছে পৃথিবীর ইতিহাস ও মানব সভ্যতাকে, ভবিষ্যতে তারাও বিলীন হয়ে যাবে পৃথিবী থেকে। কিন্তু পৃথিবী থাকবে এবং বিকশিত হবে মানবসত্তা নতুন নতুন প্রজন্মের মধ্যে দিয়ে। তাই ব্যক্তিসত্তা মৃত্যুশীল হলেও মানবসত্তা মৃত্যুহীন। কবি সে অবিনাশী মানবসত্তার অংশভাগী হিসেবেই নিজের চেতনাকে বিস্তৃত করেছেন বহু পুরানো ইতিহাস ও ভূগোলের পটভূমিতে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে বসবাসকারী মানবসত্তার অংশভাগী হিসেবেই তিনি পৃথিবীর পথে হেঁটে চলেছেন হাজার বছর ধরে। প্রাচ্যের সুবিস্তৃত অঞ্চল তিনি পরিভ্রমণ করেছেন জলপথে। সিংহল সমুদ্র থেকে রাতের অন্ধকারে পৌঁছে গেছেন মালয় সাগরে। ঘুরতে ঘুরতে তিনি চলে গেছেন খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ থেকে তৃতীয় শতকে রাজত্বকারী বিম্বিসার ও অশোকের জগতেও যে জগৎ এখন বিস্মৃতির কুয়াশায় ধূসর হয়ে উঠেছে। বিম্বিসার ও অশোকের জগৎকে পিছে ফেলে মধ্যপ্রদেশের নগরী বিদর্ভের দিকে কবি তাঁর মানসযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। ইতিহাস আর ভূগোল বিস্তৃত প্রাচীন জনপদ পরিভ্রমণের অফুরন্ত উদ্যম নিয়ে কবি যেন পথে বেরিয়েছেন। তাই যুগ থেকে যুগান্তরে, স্থান থেকে স্থানান্তরে চলছে তাঁর মানস পরিভ্রমণ।
মন্তব্য: আমাদের এ প্রাচ্যভূমিতে মানবসভ্যতার যে উদ্বোধন ঘটেছিল, তার প্রায় সমুদয় পাদপীঠ ছুঁয়ে ছুঁয়েই কবি হয়ে উঠেছেন এক ভ্রমণক্লান্ত পথিক।