স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা কি? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থার সমস্যাসমূহ আলোচনা কর।

উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশসমূহের জনগণের কল্যাণ ও জাতীয় উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বা স্বেচ্ছাসেবী সমাজ সেবামূলক সংস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে সকল এলাকায় সরকারি সংস্থা পৌছাতে পারে না সেখানে এনজিওগুলো সহজেই পৌঁছে সে এলাকার জনগণের চাহিদা অনুযায়ী বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করে তাদের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত এনজিওগুলোর
বিভিন্ন রকম সমস্যা বিদ্যমান।
→ স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা ঃ স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণেরই ফল যা সামাজিক সমস্যা সমাধান করে। যে সমাজসেবামূলক সংস্থা একটি দেশের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগে, সহযোগিতা, আন্তরিকতা ও তাদের স্বেচ্ছাপ্রদত্ত চাঁদার ভিত্তিতে পরিচালিত হয় তাকেই স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা বলে।
সাধারণ অর্থে ঃ স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা হচ্ছে জনকল্যাণে নিবেদিত-অলাভজনক সংগঠন বা বেসরকারি
মানবীয় সংস্থা। যা জনগণের কল্যাণ সাধনেরজন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে থাকে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা ঃ বিশেষ কিছু সংখ্যার অবতারণা করা হলো নিম্নে
ড. আলী আকবরের মতে, বেসরকারি সামাজিক কল্যাণ সংস্থা হচ্ছে কোনো স্বীকৃত ক্ষেত্রে কল্যাণকর সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে জনগণের স্বাধীন ইচ্ছায় প্রতিষ্ঠিত এক সংগঠন বা পদক্ষেপ এবং এর সম্পদ জনগণের চাঁদাদান ও সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভরশীল।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিবন্ধীকরণ ও নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৬১ অনুযায়ী কোনো সমাজসেবা বা কল্যাণমূলক কাজ করার জন্য ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের স্বাধীন ইচ্ছায় প্রতিষ্ঠিত সংগঠন, সমিতি বা কর্মকাণ্ডকেই স্বেচ্ছামূলক সমাজসেবা বলে। আমেরিকার জাতীয় সমাজকর্মী সমিতি প্রদত্ত সংখ্যানুযায়ী, “স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা হলো এমন সব সংস্থা যা প্রথমত ৪ নিজেদের দ্বারা গঠিত নীতিমালাকে সমাজকর্মের নীতিমালা রূপে গ্রহণ করবে।
দ্বিতীয়ত ঃ এসব নীতিমালায় আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ করবে যেখানে তা কার্যকর করতে আগ্রহী ও স্বেচ্ছায় উদ্ভূত
লোকজন নিয়ে পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয়; তৃতীয়তঃ তাদের আয়ের উৎস হবে সাধারণ জনগণের সাহায্য, বিশেষ দান বা ব্যক্তির সাহায্য, চাঁদা এবং সরকারি অনুদান; চতুর্থতঃ বিশেষ কতকগুলো উদ্দেশ্য নিয়ে নির্দিষ্ট এলাকায় এসব সংস্থা কাজ করবে।”
→ এনজিওসমূহের সমস্যাসমূহ আলোচনা করা হলো ঃ
১. আর্থিক সংকট ৪ এনজিওগুলো তাদের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে চাঁদা, দান, অনুদান ও বৈদেশিক সাহায্যের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু এসব ক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত অর্থ প্রয়োজনীয় তুলনায় নগণ্য। আবার তা ও নিয়মিত পাচ্ছে না। কাজেই এনজিও সমূহ ইচ্ছা করলেই যেমন ব্যয়সাধ্য কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে না। তেমনি গৃহীত কোনো
কর্মসূচি চালু রাখাও তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে এদের বিলুপ্তিও হয়ে থাকে।
২. অর্থ আত্মসাৎ : বাংলাদেশের এনজিওগুলোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার শিথিলতা এবং জবাবদিহিতার ব্যবস্থা না থাকার
অনেক ক্ষেত্রেই জনকল্যাণের নামে সংগৃহীত অর্থ সংগঠনের অসাধু নেতাকর্মীরা আত্মসাৎ করে থাকে। ফলে অর্থের অভাবে সংগঠনের অনেক কার্যক্রম বাতিল হয়ে যায়। আবার আত্মসাতের বিষয়টি সবাই জেনে গেলে চাঁদা এবং সাহায্যপ্রাপ্তি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সংগঠনের অস্তিত্বই শেষ হয়ে যায় ।
৩. দক্ষ কর্মীর অভাব ঃ আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় সমাজের সমস্যা নির্ধারণ করে তার সমাধানের জন্য শিক্ষিত ও দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন। বাংলাদেশের কর্মরত এনজিওগুলোতে দক্ষ কর্মী পাওয়া যায় না। দক্ষ কর্মীর অভাবের কারণে এনজিওগুলোর অনেক কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয় না।৪. সুদক্ষ নেতার অভাব ঃ এনজিওর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য প্রয়োজন সুদক্ষ নেতার । যার পরিচালনার মাধ্যমে সকল কর্মী তাদের কাজ সুন্দরভাবে সম্পাদন করে প্রতিষ্ঠানকে গতিশীল রাখতে সক্ষম হবে। কিন্তু বাংলাদেশের এনজিওগুলোতে সুদক্ষ নেতার খুবই অভাব। ফলে এনজিওগুলো তাদের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করে পারে না বিধায় শুরুতেই অনেক এনজিও শেষ হয়ে যায়।
৫. বাস্তবমুখী কার্যক্রমের অভাব ঃ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে এনজিওগুলো সরকার ও বিদেশি দাতা সংস্থার কাছ থেকে অর্থ পাওয়ার আশায় এমন কার্যক্রম গ্রহণ করে যা সমাজের বাস্তব প্রয়োজনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না। কাজেই বাস্তবতাবর্জিত কার্যক্রম নিয়ে এনজিওসমূহ বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না।
৬. সমন্বয়ের অভাব : বাংলাদেশের এনজিওগুলোর অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো সমন্বয় সাধনের জন্য কোনো কেন্দ্রীয় সংগঠন নেই । সমন্বয় ব্যবস্থার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে সংগঠনের সম্পদ ও সামর্থ্যের অপচয় ঘটে থাকে। আবার তাদের মধ্যকার সমন্বয়ের অভাবে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কলহ লেগেই থাকে। ফলে এনজিওগুলো তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না, অচিরে শেষ হয়ে যায়।
৭. জনগণের সহযোগিতার অভাব ঃ বাংলাদেশের মত অশিক্ষিত দেশের জনগণ তাদের সমস্যা ও প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতন নয়। এ কারণে তারা তাদের শক্তি সামর্থ্য দিয়ে এনজিওসমূহের সাথে কাজ করতে আগ্রহী হয় না। ফলে এনজিও তাদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে না।
৮. রাজনৈতিক অভাব ঃ আমাদের দেশে এক শ্রেণির ব্যক্তিরা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার উপায় হিসেবে এনজিও গঠন করে। আবার কখনও তারা অন্য প্রতিষ্ঠানে ঢুকে সেগুলোকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা চালায়। ফলে এনজিওগুলো স্বাধীনভাবে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পারে না।
৯. সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব ঃ এ দেশের বেশিরভাগ এনজিও তাদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসরণ করে না। এনজিওগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করে থাকে ফলে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয় না।
১০. জনগণের অনুভূত প্রয়োজনের অভাব ঃ বেশিরভাগ এনজিওগুলোর কার্যক্রমেই সরকারি সাহায্য লাভের আশায় প্রণয়ন করা হয়। এর ফলে জনগণের অনুভূত চাহিদা প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয় না। যার কারণে এনজিও কার্যক্রম বাস্তবায়নে জনগণ সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করতে চায় না। এর ফলে এনজিও কার্যক্রম চারিয়ে যেতে পারে না।
১১. অস্থায়ী ও আংশিক ঃ এনজিওর স্থায়িত্ব অনেক কম এবং কর্মপরিধি আংশিক ও অনেক ক্ষেত্রে অভীষ্ট লক্ষ্য দল সার্বিক আওতায় আসে না। এ ছাড়া জনগণের এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা অভাব রয়েছে। কর্মীরা সরে পড়লে বৃহত্তর সংগঠন স্থায়িত্ব হারায় ।
১২. গবেষণা ও মূল্যায়নের অভাব ঃ এনজিও পরিচালিত কর্মসূচি সম্পর্কে সুষ্ঠু গবেষণা ও মূল্যায়ন সম্পন্ন হয় না। ফলে তাদের কর্মসূচিগুলো জনস্বার্থ ও জনকল্যাণ কতটুকু হয়েছে তা জানা যায় না। আবার কর্মসূচিগুলো যদি ব্যর্থ হয়ে থাকে তার কারণ ও নির্ণয় করা সম্ভব হয় না ফলে সমাধান করা সম্ভব হয় না।
১৩. বাইরের প্রভাব ঃ বেসরকারি সংস্থাগুলো বিশেষত অনুদানপ্রাপ্ত (দেশি ও বিদেশি) সংস্থাসমূহ দাতাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার জন্য দরিদ্রদের স্বার্থ উপেক্ষা করে। দাতাদের ইচ্ছা ও নীতি অনুসারে সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। ফলে দাতাদের স্বার্থ রক্ষার্থে সুবিধাভোগীদের স্বার্থ, আশা-আকাঙ্ক্ষা বিচার-বিবেচনা, মূল্যবোধ ইত্যাদি উপেক্ষিত হয়।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে কর্মরত বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহের বিভিন্ন সমস্যা বিদ্যমান। এগুলোই এসব সংস্থাকে দুর্বল ও সীমাবদ্ধ করে তোলে। ফ লে এনজিওসমূহের কর্মতৎপরতা ব্যাপকতর ও বহুমাত্রিক হওয়া সত্ত্বেও প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে যথেষ্ট তাৎপর্যময় হয়ে ওঠেনি।

স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা কি? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থার সমস্যাসমূহ আলোচনা কর।

উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশসমূহের জনগণের কল্যাণ ও জাতীয় উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বা স্বেচ্ছাসেবী সমাজ সেবামূলক সংস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে সকল এলাকায় সরকারি সংস্থা পৌছাতে পারে না সেখানে এনজিওগুলো সহজেই পৌঁছে সে এলাকার জনগণের চাহিদা অনুযায়ী বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করে তাদের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত এনজিওগুলোর
বিভিন্ন রকম সমস্যা বিদ্যমান।
→ স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা ঃ স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণেরই ফল যা সামাজিক সমস্যা সমাধান করে। যে সমাজসেবামূলক সংস্থা একটি দেশের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগে, সহযোগিতা, আন্তরিকতা ও তাদের স্বেচ্ছাপ্রদত্ত চাঁদার ভিত্তিতে পরিচালিত হয় তাকেই স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা বলে।
সাধারণ অর্থে ঃ স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা হচ্ছে জনকল্যাণে নিবেদিত-অলাভজনক সংগঠন বা বেসরকারি
মানবীয় সংস্থা। যা জনগণের কল্যাণ সাধনেরজন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে থাকে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা ঃ বিশেষ কিছু সংখ্যার অবতারণা করা হলো নিম্নে
ড. আলী আকবরের মতে, বেসরকারি সামাজিক কল্যাণ সংস্থা হচ্ছে কোনো স্বীকৃত ক্ষেত্রে কল্যাণকর সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে জনগণের স্বাধীন ইচ্ছায় প্রতিষ্ঠিত এক সংগঠন বা পদক্ষেপ এবং এর সম্পদ জনগণের চাঁদাদান ও সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভরশীল।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিবন্ধীকরণ ও নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৬১ অনুযায়ী কোনো সমাজসেবা বা কল্যাণমূলক কাজ করার জন্য ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের স্বাধীন ইচ্ছায় প্রতিষ্ঠিত সংগঠন, সমিতি বা কর্মকাণ্ডকেই স্বেচ্ছামূলক সমাজসেবা বলে। আমেরিকার জাতীয় সমাজকর্মী সমিতি প্রদত্ত সংখ্যানুযায়ী, “স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা হলো এমন সব সংস্থা যা প্রথমত ৪ নিজেদের দ্বারা গঠিত নীতিমালাকে সমাজকর্মের নীতিমালা রূপে গ্রহণ করবে।
দ্বিতীয়ত ঃ এসব নীতিমালায় আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ করবে যেখানে তা কার্যকর করতে আগ্রহী ও স্বেচ্ছায় উদ্ভূত
লোকজন নিয়ে পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয়; তৃতীয়তঃ তাদের আয়ের উৎস হবে সাধারণ জনগণের সাহায্য, বিশেষ দান বা ব্যক্তির সাহায্য, চাঁদা এবং সরকারি অনুদান; চতুর্থতঃ বিশেষ কতকগুলো উদ্দেশ্য নিয়ে নির্দিষ্ট এলাকায় এসব সংস্থা কাজ করবে।”
→ এনজিওসমূহের সমস্যাসমূহ আলোচনা করা হলো ঃ
১. আর্থিক সংকট ৪ এনজিওগুলো তাদের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে চাঁদা, দান, অনুদান ও বৈদেশিক সাহায্যের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু এসব ক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত অর্থ প্রয়োজনীয় তুলনায় নগণ্য। আবার তা ও নিয়মিত পাচ্ছে না। কাজেই এনজিও সমূহ ইচ্ছা করলেই যেমন ব্যয়সাধ্য কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে না। তেমনি গৃহীত কোনো
কর্মসূচি চালু রাখাও তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে এদের বিলুপ্তিও হয়ে থাকে।
২. অর্থ আত্মসাৎ : বাংলাদেশের এনজিওগুলোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার শিথিলতা এবং জবাবদিহিতার ব্যবস্থা না থাকার
অনেক ক্ষেত্রেই জনকল্যাণের নামে সংগৃহীত অর্থ সংগঠনের অসাধু নেতাকর্মীরা আত্মসাৎ করে থাকে। ফলে অর্থের অভাবে সংগঠনের অনেক কার্যক্রম বাতিল হয়ে যায়। আবার আত্মসাতের বিষয়টি সবাই জেনে গেলে চাঁদা এবং সাহায্যপ্রাপ্তি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সংগঠনের অস্তিত্বই শেষ হয়ে যায় ।
৩. দক্ষ কর্মীর অভাব ঃ আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় সমাজের সমস্যা নির্ধারণ করে তার সমাধানের জন্য শিক্ষিত ও দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন। বাংলাদেশের কর্মরত এনজিওগুলোতে দক্ষ কর্মী পাওয়া যায় না। দক্ষ কর্মীর অভাবের কারণে এনজিওগুলোর অনেক কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয় না।৪. সুদক্ষ নেতার অভাব ঃ এনজিওর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য প্রয়োজন সুদক্ষ নেতার । যার পরিচালনার মাধ্যমে সকল কর্মী তাদের কাজ সুন্দরভাবে সম্পাদন করে প্রতিষ্ঠানকে গতিশীল রাখতে সক্ষম হবে। কিন্তু বাংলাদেশের এনজিওগুলোতে সুদক্ষ নেতার খুবই অভাব। ফলে এনজিওগুলো তাদের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করে পারে না বিধায় শুরুতেই অনেক এনজিও শেষ হয়ে যায়।
৫. বাস্তবমুখী কার্যক্রমের অভাব ঃ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে এনজিওগুলো সরকার ও বিদেশি দাতা সংস্থার কাছ থেকে অর্থ পাওয়ার আশায় এমন কার্যক্রম গ্রহণ করে যা সমাজের বাস্তব প্রয়োজনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না। কাজেই বাস্তবতাবর্জিত কার্যক্রম নিয়ে এনজিওসমূহ বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না।
৬. সমন্বয়ের অভাব : বাংলাদেশের এনজিওগুলোর অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো সমন্বয় সাধনের জন্য কোনো কেন্দ্রীয় সংগঠন নেই । সমন্বয় ব্যবস্থার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে সংগঠনের সম্পদ ও সামর্থ্যের অপচয় ঘটে থাকে। আবার তাদের মধ্যকার সমন্বয়ের অভাবে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কলহ লেগেই থাকে। ফলে এনজিওগুলো তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না, অচিরে শেষ হয়ে যায়।
৭. জনগণের সহযোগিতার অভাব ঃ বাংলাদেশের মত অশিক্ষিত দেশের জনগণ তাদের সমস্যা ও প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতন নয়। এ কারণে তারা তাদের শক্তি সামর্থ্য দিয়ে এনজিওসমূহের সাথে কাজ করতে আগ্রহী হয় না। ফলে এনজিও তাদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে না।
৮. রাজনৈতিক অভাব ঃ আমাদের দেশে এক শ্রেণির ব্যক্তিরা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার উপায় হিসেবে এনজিও গঠন করে। আবার কখনও তারা অন্য প্রতিষ্ঠানে ঢুকে সেগুলোকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা চালায়। ফলে এনজিওগুলো স্বাধীনভাবে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পারে না।
৯. সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব ঃ এ দেশের বেশিরভাগ এনজিও তাদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসরণ করে না। এনজিওগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করে থাকে ফলে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয় না।
১০. জনগণের অনুভূত প্রয়োজনের অভাব ঃ বেশিরভাগ এনজিওগুলোর কার্যক্রমেই সরকারি সাহায্য লাভের আশায় প্রণয়ন করা হয়। এর ফলে জনগণের অনুভূত চাহিদা প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয় না। যার কারণে এনজিও কার্যক্রম বাস্তবায়নে জনগণ সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করতে চায় না। এর ফলে এনজিও কার্যক্রম চারিয়ে যেতে পারে না।
১১. অস্থায়ী ও আংশিক ঃ এনজিওর স্থায়িত্ব অনেক কম এবং কর্মপরিধি আংশিক ও অনেক ক্ষেত্রে অভীষ্ট লক্ষ্য দল সার্বিক আওতায় আসে না। এ ছাড়া জনগণের এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা অভাব রয়েছে। কর্মীরা সরে পড়লে বৃহত্তর সংগঠন স্থায়িত্ব হারায় ।
১২. গবেষণা ও মূল্যায়নের অভাব ঃ এনজিও পরিচালিত কর্মসূচি সম্পর্কে সুষ্ঠু গবেষণা ও মূল্যায়ন সম্পন্ন হয় না। ফলে তাদের কর্মসূচিগুলো জনস্বার্থ ও জনকল্যাণ কতটুকু হয়েছে তা জানা যায় না। আবার কর্মসূচিগুলো যদি ব্যর্থ হয়ে থাকে তার কারণ ও নির্ণয় করা সম্ভব হয় না ফলে সমাধান করা সম্ভব হয় না।
১৩. বাইরের প্রভাব ঃ বেসরকারি সংস্থাগুলো বিশেষত অনুদানপ্রাপ্ত (দেশি ও বিদেশি) সংস্থাসমূহ দাতাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার জন্য দরিদ্রদের স্বার্থ উপেক্ষা করে। দাতাদের ইচ্ছা ও নীতি অনুসারে সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। ফলে দাতাদের স্বার্থ রক্ষার্থে সুবিধাভোগীদের স্বার্থ, আশা-আকাঙ্ক্ষা বিচার-বিবেচনা, মূল্যবোধ ইত্যাদি উপেক্ষিত হয়।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে কর্মরত বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহের বিভিন্ন সমস্যা বিদ্যমান। এগুলোই এসব সংস্থাকে দুর্বল ও সীমাবদ্ধ করে তোলে। ফ লে এনজিওসমূহের কর্মতৎপরতা ব্যাপকতর ও বহুমাত্রিক হওয়া সত্ত্বেও প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে যথেষ্ট তাৎপর্যময় হয়ে ওঠেনি।