উত্তর. ভূমিকা ঃ বেসরকারি বা স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা বলতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ, সহযোগিতা,
আন্তরিকতা ও তাদের স্বেচ্ছাপ্রদত্ত চাঁদার ভিত্তিতে পরিচালিত সমাজসেবামূলক সংস্থাকে বুঝায়। এসব সংস্থা অলাভজনক। প্রত্যেক দেশেই এরূপ সংস্থা পরিচালনার নিয়ম- নীতি ও আইন থাকে। এসব সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক দৈহিক, মানসিক সমস্যা সমাধানে এবং তাদের উন্নয়ন ও কল্যাণে কাজ করে থাকে।
→ বেসরকারি/স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণের ইতিহাস ঃ মানব সমাজের বিভিন্নমুখী সমস্যার সমাধানে বেসরকারি সমাজকল্যাণ প্রচেষ্টার উদ্ভব ঘটে। এসব প্রচেষ্টার মাধ্যমে জনগণের উদ্যোগ ও অর্থানুকূল্যে জন্ম নেয় স্বেচ্ছামূলক সমাজকল্যাণ সংস্থা, নিম্নে স্বেচ্ছামূলক সমাজকল্যাণ সংস্থার জন্মের ইতিহাস দেওয়া হল
১. বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগ ঃ উন্নয়নশীল ও অনুন্নত বিশ্বে বেসরকারি সংস্থা এর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। মূলত উন্নত বিশ্ব দরিদ্র দেশগুলোর সাহায্য প্রদানের জন্য সত্তরের দশকে এরূপ সংস্থা গঠনের প্রয়াস পায়। ১৯৭৩ সালে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে তদানীন্তন বিশ্বব্যাংকের (WB) প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনাভারা বিশ্বব্যাংকের পরিচালকমণ্ডলীর সভার উন্নয়নমূলক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রয়োজনীয়তা উপস্থাপন করেন। এরপর বিশ্বব্যাংকসহ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) এ ধরনের প্রসার ঘটায়।
২. জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞের ঢাকা সফর : ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ভারত থেকে আগত মোহাজের সমস্যা সৃষ্টি হয়। এসব মোহাজেরদের পুনর্বাসন সমস্যাসহ শিল্পায়ন শহরায়নজনিত আর্থ-সামাজিক ও দেশ পুনর্গঠন সমস্যাও দেখা দেয়। ১৯৫১ সালে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের জাতিসংঘের পরামর্শ ও সাহায্য কামনার প্রেক্ষিতে ১৯৫২ সালে এক বিশেষজ্ঞ দল ঢাকার আসেন। তাঁরা স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সমাজকর্মীর প্রয়োজনে পেশাগত শিক্ষা কার্যক্রম চালুর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। এভাবে স্বেচ্ছা সমাজকল্যাণ উৎসাহিত ও উদ্ভাবিত হয়। কিন্তু এসবেরও. বহু পূর্বে এদেশে কিছু বেসরকারি সংস্থার কর্মতৎপরতার কথা শোনা যায়। যেমন-ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটি (১৭৯৪)
দ্যা ক্রিশ্চিয়ান মিশন হাসপাতাল (১৮৮০), কেয়ার (১৯৪৮) প্রভৃতি।
৩. জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ ? ১৯৫৫ সালে জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ (National council of social welfare) প্রতিষ্ঠিত হয়। পরের বছরই ২টি প্রাদেশিক (ঢাকার ১টি) সমাজকল্যাণ পরিষদ গঠন করে। এর মাধ্যমে বেসরকারি সমাজকল্যাণ প্রশাসনের সূত্রপাত ঘটে। অনুদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে এটি প্রথমে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে এটি জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদে পরিণত হয়।
৪. স্বাধীনতার পরবর্তী সময় ঃ ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হবার প্রেক্ষিতে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ শুরু হওয়ায় ব্যাপকভাবে বেসরকারি সংস্থার প্রয়োজনীয়তা অনভূত হয়। এ সময় বিদেশি সাহায্যপুষ্ট কিছু বেসরকারি সংস্থা এদেশের দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। তখন থেকেই এদেশে বেসরকারি সংস্থার কাজের অভিজ্ঞতা ও অনুপ্রেরণার সূত্রপাত ঘটে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ব্যাপকভাবে স্বেচ্ছামূলক সমাজকল্যাণ সংস্থা এদেশে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড শুরু করে। তখন আর্থ-সামাজিক পুনর্গঠন, দেশ গঠন ও দারিদ্র্য বিমোচনসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধানের ব্যাপক প্রয়োজন অনুভূত হয়। বিশেষ করে গ্রাম প্রধান বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণার্থে যখন সরকারের একার পক্ষে ব্যাপক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, তখন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও বেসরকারি সংস্থা জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বহুমুখী কর্মসূচি শুরু করে। যেমন- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, ঋণদান,
কর্মসংস্থান, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রভৃতি । এ ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের মডেল উপস্থাপনে সক্ষম হয়েছে।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বেসরকারি বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অনেক ধাপ পেরিয়ে বর্তমানে এই অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর সরকারের পাশাপাশি দুর্গত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দুস্থ, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ