স্বাধীন বাংলাদেশের পরিচিতি বর্ণনা কর।

উত্তর৷ ভূমিকা : সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের অধিকারী আমাদের এ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ নামে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত বিস্তৃত জনপদের একটি অংশ মাত্র। বাংলাদেশের বাইরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যের কিছু অংশ এবং মায়ানমারের আরাকানে বাংলা ভাষাভাষী লোক বাস করে।
বর্তমান বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষী লোকের সংখ্যা পঁচিশ কোটি। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে তা ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ প্রায় দুইশ বছরের ইংরেজ শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নামান্তর।
বাংলাদেশের পরিচয় : এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে বাংলাদেশ অবস্থিত। এর নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। রাজধানী শহর ঢাকা এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এটা প্রায় ২০°৩৪′ উত্তর হতে ২৬°৩৮′ উত্তর অক্ষরেখা এবং ৮৮°০১´ পূর্ব দ্রাঘিমা হতে ৯২°৪১′ পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যন্ত বিস্তৃত। পূর্ব থেকে পশ্চিমে এর সর্বোচ্চ বিস্তৃতি প্রায় ৪৪০ কি. মি. এবং উত্তরে উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণে দক্ষিণ-পূর্ব সর্বোচ্চ ৭৬০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের মাঝামাঝি দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা চলে গেছে, ফলে এদেশ ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের প্রায় তিন দিকে ভারত রাষ্ট্র এবং কেবল দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও আসাম; পূর্বে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম এবং মায়ানমার, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। বাংলাদেশের মোট সীমারেখা ৫,১৩৮ কি. মি.। এর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমারেখার দৈর্ঘ্য ৪,১৫৬ কিলোমিটার। বাংলাদেশ মায়ানমার সীমারেখার দৈর্ঘ্য ২৭১ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বা তটরেখার দৈর্ঘ্য ৭১১ কিলোমিটার। বাংলাদেশের সরকার পদ্ধতি হচ্ছে সংসদীয় পদ্ধতি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এক কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট। এর নাম জাতীয় সংসদ। জাতীয় সংসদে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত ৩০০ জন প্রতিনিধি থাকে। তাছাড়া মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসন রয়েছে। সর্বমোট ৩৫০টি সংসদীয় আসন রয়েছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৪-২০১৫ অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৫ কোটি ৭৯ লাখ। (২০১১ সালের ১৬ জুলাই আদমশুমারির রিপোর্ট অনুযায়ী জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭২ হাজার ২৬৩ জন। মোট জনসংখ্যার ৭,৪৭, ৯১,৯৭৮ জন পুরুষ, ৭,৪০,৮০,৩৮৬ জন মহিলা)। পুরুষ ও মহিলা অনুপাত ১০৪.৯ : ১০০ জন। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,০৩৫ জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৬%। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭০.৭ বছর। পুরুষ ৬৯.৯ বছর, মহিলা ৭১.৫ বছর। সাক্ষরতার হার ৬২.৩%, মাথাপিছু আয় ১,৩১৪ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের স্থানীয় সময় গ্রিনিচের সময় অপেক্ষা ৬ ঘণ্টা আগে বাংলাদেশে মৌসুমি জলবায়ু বিরাজমান। গড় তাপমাত্রা ২৫.৭৫° সেলসিয়াস, গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০৩ সেন্টিমিটার। বাংলাদেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান।
বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রধানত কৃষিনির্ভর। বাংলাদেশ প্রতিবছর পণ্য রপ্তানি করে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি দ্রব্যগুলো হলো তৈরি পোশাক, চা, হিমায়িত চিংড়ি, চামড়া, কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্যাদি । বাংলাদেশের প্রধান আমদানি দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে খাদ্যসামগ্রী, অপরিশোধিত তেল, ঔষধ, শিল্পের কাঁচামাল, কলকব্জা, রাসায়নিক দ্রব্য, খুচরা যন্ত্রাংশ প্রভৃতি। বাংলাদেশে ৮টি বিভাগ রয়েছে। তাহলো- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর এবং সর্বশেষ
ময়মনসিংহ বিভাগ । বাংলাদেশে সিটি কর্পোরেশন ১১টি, জেলা ৬৪টি, উপজেলা ৪৮৯টি (২০১৫ ইং), প্রশাসনিক থানা ৬৩৭টি (২০১৫ ইং), ইউনিয়ন ৪,৫৬২টি,পৌরসভা ৩২০টি (২০১৬ ইং) এবং গ্রামের সংখ্যা ৮৭,১৯১টি রয়েছে, যা বাংলাদেশকে একটি নির্দিষ্ট সক্রিয়তা দান করেছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের অবস্থান ও ভূপ্রকৃতি এদেশকে এক নতুন রূপ দান করেছে। সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে ভূপ্রকৃতির প্রভাব অপরিসীম। এদেশের ভূপ্রকৃতির উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে এদেশের মানুষের জীবনধারা। ভূপ্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই এদেশে প্রচুর কৃষিপণ্য, অর্থকরী ফসল ও প্রাকৃতিক সম্পদের সমারোহ দেখতে পাওয়া যায়।