অথবা, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে শিল্পী-সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীদের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনে এক স্মরণীয় ঘটনা। এ মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার প্রত্যাশিত লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে। তাই নিজের অধিকারকে ছিনিয়ে আনার জন্য, দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে স্বাধীন করার জন্য ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সামাজিক জীবনে এক দীপালি সংযোজন। এ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে স্থান দখল করে নেয়।
শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের অবদান : যদিও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নিয়ামক শক্তি ছিল জনগণ, তারপরও এ যুদ্ধে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের অবদান ছিল প্রশংসনীয়।
শিল্পীগণ গণসংগীত ও দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশন করে দেশের জনসাধারণকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছেন। লেখকগণ পত্রপত্রিকায়, বই প্রকাশের মাধ্যমে জনগণকে সাহস যুগিয়েছেন। বিভিন্ন লিফলেট প্রকাশ করে সাহস যুগিয়েছেন। এছাড়া লেখকগণ স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে লেখনী দ্বারা বাংলাদেশের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের গতি, প্রকৃতি, মানুষের করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে উজ্জীবিত করেছিলেন। তাঁদের লেখনীয় মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে মানসিক ও নৈতিকভাবে বলীয়ান করেছিলেন, সাহস যুগিয়েছিলেন, জনগণকে শত্রুর বিরুদ্ধে দুর্দমনীয় করে রেখেছিলেন। শিক্ষকগণ বিভিন্নভাবে ছাত্রদের উৎসাহিত করেছেন, সাহায্য করেছেন। চিত্রশিল্পীরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিকী চিত্র অঙ্কন করে মুক্তিযুদ্ধাদের সাহস যুগিয়েছেন। এছাড়া কবি-সাহিত্যিক শিল্পীরা বিদেশে কবিতা পাঠের আয়োজন করে। সংগীতের আয়োজন করে টাকা সংগ্রহ করে। সেই টাকা তাঁরা যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করেন। সাংবাদিকরা তথ্যসংগ্রহ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন। চিকিৎসকগণ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করেন। এভাবে কবি-সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীরা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন।
উপসংহার : উপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, বাঙালির বহুদিনের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য দেশের সর্বস্তরের জনগণ সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে।