মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর অবদান আলোচনা কর।

অথবা, স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর অবদান সংক্ষেপে তুলে ধর।
অথবা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তি বাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর। ভূমিকা :
১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তানের দুটি প্রদেশ ছিল। একটি ছিল পূর্ব পাকিস্তান, অন্যটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে পূর্ব পাকিস্তান নামে সারাবিশ্বে পরিচিত ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তান সামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বৈষম্যের শিকার হয়েছিল। এ বন্দীদশা থেকে মুক্তির জন্য বাংলার মানুষ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও পশ্চিম পাকিস্তান তা সফল হতে দেয়নি। অবশেষে বাঙালি তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়।
মুক্তিবাহিনী : স্বাধীনতা অর্জনের জন্য দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালায়। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, আনসার, ছাত্র, যুবক প্রভৃতি নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়। অস্থায়ী মুজিবনগর সরকার অনুধাবন করেছিলেন যে, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হলে আমাদের মুক্তিবাহিনীকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে সরকার মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পসমূহে মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। তবে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে, আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে শত্রুমুক্ত করার লক্ষ্যে মৃত্যুবরণ করার জন্যই যুদ্ধে যোগাদান করেছিলেন। তাই তারা ছিলেন দেশপ্রেমিক, অসীম সাহসী এবং আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ যোদ্ধা। ফলে মাত্র কয়েক সপ্তাহের প্রশিক্ষণে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা কৌশলে দক্ষ হয়ে উঠেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ভারত ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করে। সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। প্রত্যেক সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন একজন সেক্টর কমান্ডার। জুন মাসের শেষের দিকে মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয় এবং তখন থেকেই গেরিলা ও সম্মুখ তৎপরতা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। অক্টোবর-নভেম্বরে সমগ্র দেশব্যাপী মুক্তিবাহিনীর গেরিলা তৎপরতা ভীষণ আকার ধারণ করে। পাকবাহিনীকে জলে-স্থলে পর্যদুস্ত করে ফেলে। এতদ্‌সত্ত্বেও পাকবাহিনী সর্বত্র ধ্বংসলীলা চালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ছিলেন মূলত দেশের কৃষক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন সাধারণ মানুষ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুক্তিবাহিনীর সশস্ত্র সংগ্রাম যুদ্ধে বিজয়ী হতে অনেক সাহায্য করেছে। তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে আজ আমরা উপভোগ করতে পারছি স্বাধীনতা।