স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র কী?

অথবা, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মূল বক্তব্য কী ছিল?
উত্তর৷ ভূমিকা :
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত্রে পাকিস্তানি বাহিনী নির্বিচারে নিরীহ বাঙালিদের উপর গণহত্যা শুরু করে। পূর্ব বাংলার সংগ্রামী জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং শুরু হয় মুক্তির সংগ্রাম । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা ছিল প্রেরণার মূল উৎস।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র : ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঘোষণা প্রদান করেন। তাঁর মূল ঘোষণাটি ছিল ইংরেজিতে যার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়, “এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের মানুষ যে
যেখানে আছেন, আপনাদের যা কিছু আছে তা নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত দেশবাসীকে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।”
আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ. হান্নানের ঘোষণা : এম. এ. হান্নান ২৬ মার্চ দুপুরে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন। তার ঘোষণা ছিল নিম্নরূপ :
“আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ও তাঁর নামে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করছি।”
মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষণা : ২৭ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচার করেন। তার ঘোষণাটি ছিল ইংরেজিতে, যার বাংলা অর্থ নিম্নরূপ : “আমি মেজর জিয়া, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর অস্থায়ী প্রধান সেনাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি।”
১০ এপ্রিল স্বাধীনতার আনুষ্ঠাি ঘোষণা : ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে সরকারের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণাটি নিম্নরূপ :
“এবং যেহেতু উল্লিখিত বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাজের জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের । অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লব কার্যক্রম দ্বারা বাংলাদেশের উপর তাদের কার্যকরী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশের জনগণ প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেড দিয়েছেন, আমরা সেই বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিরা একটি গণপরিষদ গঠিত হয়ে পারস্পরিক আলোচনা করে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার, বলবৎ রাখার জন্য বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্ররূপে ঘোষণা করছি এবং এতদ্বারা পূর্বাহ্ণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা অনুমোদন করছি। আমরা আরো ঘোষণা করছি যে, “আমাদের এ স্বাধীনতা ঘোষণা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে কার্যকরী বলে গণ্য হবে।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয় এবং তখন থেকে মুক্তিযুদ্ধ একটি প্রাতিষ্ঠানিকতা লাভ করে।